অফিসে রোমান্স: শুরুর আগেই ২০৮ কোটি টাকার চাকরি হারালেন জন নিল

১৭ মিলিয়ন ডলারের চাকরি শুরু করার আগেই তা হারালেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের (এআইজি) নতুন নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট জন নিল। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই বেতনের পরিমাণ প্রায় ২০৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। কিন্তু কেন? এত বড় গ্রুপের একজন প্রেসিডেন্ট এত বিশাল অংকের চাকরি শুরু করার আগেই কেন তা হারালেন? তা নিয়ে কৌতুহল চারদিকে। তাকে কোম্পানি আর নিচ্ছে না এ ঘোষণায় বীমা খাতে ব্যাপক চমক সৃষ্টি করেছে। এ বছর শুরুর আগ পর্যন্ত লয়েডস অব লন্ডনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ছিলেন জন নিল। তারা জানায়, গত মাস থেকে তারা নিলের আচরণ নিয়ে তদন্ত করছে। একই দিনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল খবর প্রকাশ করে যে, ওই তদন্তে এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে জন নিলের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ উঠতেই এআইজি তার চাকরির অফার বাতিল করে।

এ খবর দিয়ে বলা হয়, এটাই ছিল নিলের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ‘অফিস রোমান্স’ কেলেঙ্কারি। এর আগেই জানা ছিল, অস্ট্রেলিয়ান বীমা কোম্পানি কিউবিই’তে সিইও থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালে তিনি এক অধঃস্তন কর্মীর সঙ্গে গোপন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ জন্য তার ৫.৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার বোনাস কেটে নেয়া হয়। পরে জানা যায়, যাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা নিলের আগের সহকারীকে প্রতিস্থাপন করেছিলেন তিনি। আর জন নিল ইতিমধ্যে সেই আগের সহকারীকে বিয়েও করেছিলেন। এ বিষয়ে এআইজি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। আর জন নিলও কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অফিস রোমান্সের কারণে নেসলে এসএ, কোহল’স করপ ও অ্যাস্ট্রোনোমার-এর মতো কোম্পানির সিইও পর্যন্ত চাকরি হারিয়েছেন। অ্যাস্ট্রোনোমারের সিইও অ্যান্ডি বায়রন এমনকি স্টেডিয়ামে ‘কিস ক্যাম’-এ ধরা পড়ার পর জুলাইয়ে পদ হারান।

আইনজীবী ইয়ান হারগ্রিভস বলেন, আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলোর একটি এখন কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি। অনেক কোম্পানি অফিস রোমান্সের নিয়ম কঠোর করেছে। কেউ কেউ প্রায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে। এমন পরিবেশে এত বড় একটি নিয়োগে এমন বিষয় বাদ পড়ে যাওয়া অনেকের কাছে বিস্ময়কর। এআইজি’তে যোগ দিলে জন নিল পেতেন প্রথম বছরে বেতন ও বোনাস মিলিয়ে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার। আরও বছরে ৫ মিলিয়ন ডলারের ইকুইটি অ্যাওয়ার্ড। তিন বছরে ভেস্টিংযোগ্য ৪.৫ মিলিয়ন ডলারের রেস্ট্রিকটেড স্টক। ২.৭ মিলিয়ন ডলারের নগদ বোনাস। মোট প্যাকেজ প্রায় ১৭.২ মিলিয়ন ডলারের।
৬০ বছর বয়সী জন নিল ১৯৮৬ সালে লয়েডসে ট্রেইনি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

পরে তিনি এনসাইন পরিচালনা করেন, যার মালিকানা কিউবিই’র হাতে গেলে নিল কিউবিই’তেই যোগ দেন। সেখানে আট বছর পর তিনি সিইও হন। তবে সিইও হিসেবে তার সময় বিনিয়োগকারীদের খুব একটা লাভ দেয়নি, সহযোগী কোম্পানিগুলোর যেখানে গড় রিটার্ন ছিল ২১ ভাগ, সেখানে কিউবিই’র ছিল মাত্র এক ভাগ। কিউবিই ছাড়ার সময় তিনি স্বীকার করেন, ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে সম্পর্ক গোপন করার কারণে তার বোনাস কমানো হয়। ২০১৮ সালে তিনি লয়েডস অব লন্ডনের সিইও হন। তার সময়েই লয়েডস লাভে ফিরে। তবে তিনি একই সময়ে ২০১৯ সালে ব্লুমবার্গ বিজনেসউইক-এর লয়েডসে যৌনহয়রানির ব্যাপকতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বড় ধরনের সংস্কার আনতে বাধ্য হন। এর মধ্যে আছে আজীবন নিষেধাজ্ঞা, হুইসেলব্লোয়ার হটলাইন ইত্যাদি। তিনি তখন বলেছিলেন, এটা সেই লয়েডস নয় যেখানে আমি থাকতে চাই। এ বছরের জানুয়ারিতে লয়েডস ঘোষণা করে জন নিল বিদায় নিচ্ছেন। এরপর তিনি এঅন-এর একটি শীর্ষ পদে যোগ দিতে সম্মত হন। কিন্তু এর মাঝেই এআইজি আরও ভালো অফার দিয়ে তাকে নিয়ে যায়। জন নিল নতুন চাকরি শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তখনই তার আগের অফিস সম্পর্ক নিয়ে গুজব লয়েডসের চেয়ারম্যান চার্লস রক্সবার্গ-এর নজরে আসে। তিনি অক্টোবরে একটি স্বাধীন তদন্ত শুরু করেন।

লয়েডসের সাবেক সিইও ইনগা বেল বলেন, আমি ভেবেছিলাম আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। খবর শুনে আমি হতাশ। বিশেষ করে এআইজি’র পূর্বের জেনারেল ইন্স্যুরেন্স চেয়ারম্যান ডেভিড ম্যাকএলরয়ের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা চলমান। এ অবস্থায় কোম্পানির আরও সতর্ক থাকার কথা ছিল। লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক জেমস বার্কলে বলেন, মজার ব্যাপার হলো- যে ইতিহাস ছিল, তার পরও কেন সবাই এতটা বিস্মিত, সেটাই বিস্ময়।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.