৩২ নম্বরে হামলা: এগুলো আগামী দিনে গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা ধারণা করছি, এগুলো গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য, আগামী দিনে গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করবো। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, এটি কারা করেছে- এই তথ্য আমাদের কাছে নেই। এতে সরকারের কী ভূমিকা ছিল, সেই তথ্যও আমাদের কাছে নেই। সুতরাং আমরা অল্প কিছু সময় আশা করবো, সব কিছু পরিষ্কার হয়ে হবে, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা এজন্য দায়ী- সকল পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলে আমরা এই সম্পর্কে বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া মিডিয়ার সামনে, জনগণের সামনে প্রকাশিত করবো। অপূর্ণ তথ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সঠিক নয়।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে এদেশকে আনস্টেবল সিচ্যুয়েশনে নেয়ার জন্য, এদেশকে ধ্বংস করতে যেটুকু তিনি বাকি রেখেছেন, সেটি পূর্ণ করার জন্য নতুনভাবে এই ফ্যাসিস্ট দলকে (আওয়ামী লীগ) নিয়ে মাঠে নামতে চান। অবিলম্বে এখন প্রয়োজন বাংলাদেশে সকল দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে চাই। বিশেষ করে যে ছাত্রসমাজ অংশগ্রহণ করেছে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তাদের এবং হাসিনাবিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য আমরা গড়ে তুলতে চাই।
ওদিকে ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার এক প্রতিক্রিয়ায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই ঘটনায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুবই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে এই বুলডোজার কোথা থেকে এলো? সরকার যদি এভাবে এটাতে ইনভলভ হয়ে যায়, সেটা খুবই দুঃখজনক এবং খুবই উদ্বগের কারণ। এরকম পথ থেকে সরকারকে অবিলম্বে সরে আসা উচিত।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বিবিসিকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এখানে মনে হয় সরকারের ভেতর থেকে সমর্থন রয়েছে। তা না হলে তো এভাবে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে এই পদক্ষেপ নেয়া কিংবা এই কর্মযজ্ঞে পাবলিককে উত্তেজিত করে অস্থিরতা তৈরি করা, এটা তো সরকারের ভেতরের সমর্থন ছাড়া হওয়ার কথা নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দিকেও আঙ্গুল তুলে নুর বলেন, আমরা তো দেখি নাই সরকারের ভেতর থেকে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বরং সরকারের উপদেষ্টাদের কারও কারও ফেসবুকে লেখাতেও আমরা দেখেছি যে, এটাতে সমর্থন রয়েছে।
ওদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনায় মেজর হাফিজ বলেন, একাত্তর সালে অনেক যুদ্ধের পর আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। কিন্ত স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে আমাদের স্বপ্ন  ভেঙে দেয়া হলো। যে লক্ষ্য ধারণ করে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার- ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্থাপিত হলো একটি একদলীয় রাষ্ট্র। যেখানে সংবাদপত্র থাকবে না, রাজনৈতিক দল থাকবে না, সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না, এমন একটি রাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এদেশে ১৯৭৫ সালে কায়েম হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, এর নাম হলো আওয়ামী লীগ। এদের কাছে কোনো দেশ নাই। এদের কাছে নিজের দল, নিজের পরিবার, নিজের স্বার্থ, নিজের সম্পদ আহরণ মূল কাজ। আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের কতো সম্পত্তি জানি না। আমরা মিডিয়াতে মাঝে মধ্যে খবর দেখি, আগে তো জানতাম না যে, শেখ পরিবারেই ৮টি বাগান বাড়ি রয়েছে গাজীপুর এলাকাতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন সেখানে ৪ শ’ কোটি টাকা আয় করেছে, হেলিকপ্টারে ঘুরে বেড়ায় অকল্পনীয়। কী ধরনের গণতন্ত্র তারা প্রতিষ্ঠা করেছে।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আশা করবো, এখন অতি দ্রুত এদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। কারণ গণতন্ত্র না থাকার ফলেই নানা ধরনের ঘটনা ঘটে। এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছে। বিশেষ করে আমাদের দল বিএনপি, গত ১৫টি বছর কতো মানুষ জীবন দিয়েছে, কতো মানুষের জীবন কারা অন্তরালে গিয়েছে, আমাদের যুবকেরা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে ত্যাগের মাধ্যমে, কিন্তু প্রত্যাশিত গণতন্ত্র এখনো দেখা পাওয়া যায়নি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে কারা দাঁড়ায়?

তিনি বলেন, একটি মহল চেষ্টা করে এখন নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে। সুতরাং এই নির্বাচনকে যত দীর্ঘায়িত করা যায়। বিএনপি যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, এটা তো অপরাধ হতে পারে না। বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার জন্য কেন নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা হবে-এটি আমরা বুঝতে অক্ষম। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অনুরোধ রাখবো, আপনি দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিন। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের প্রধান অনুষঙ্গ। এই নির্বাচনকে ঠুনকো অজুহাতের কারণে আর দূরে ঠেলে দেবেন না।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ’র সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.