সেনাবাহিনী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রচলিত আইনে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করেছি, সেই আইনেই বিচার করা যাবে। তবে এখন সবাই সবার মৃত্যুদণ্ড চায়। মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মালিকতো আর আমি না। দেশে কোর্টকাচারী রয়েছে। তারই ঠিক করবে,কার মৃত্যুদণ্ড হবে বা কার হবে না।
সেটা আমরা করবো কি ভাবে। এটা সরকার করবে না,সরকারের দায়িত্ব নয়। একইসঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মত অপরাধের বিচারে নতুন  কোন আইন করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনেই এর বিচার করা হবে। রবিবার রাতে ব্রিটিশ ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। গত শনিবার হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন পাসের দাবি তোলার পরদিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ প্রচলিত অনেক আইনেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বিরোধীদলের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছেন, বর্তমান সেনাবাহিনী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করবে না। শেখ হাসিনা বলেন, নতুন আইন না করলেও হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো নিয়ে তাঁর সরকার আলোচনা করে দেখবে। তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলোর মধ্যে কিছু গ্রহণযোগ্য হলে, তা গ্রহণ করবো। আর যেগুলো গ্রহণযোগ্য হবে না, সে গুলো গ্রহণ করবো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ব্লগারদের গ্রেপ্তারের সঙ্গে লংমার্চের কোন সম্পর্ক ছিল না। তিনি উল্লেখ করেছেন, ব্লগ এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কে কে কি লিখছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়ে কিছু আছে কিনা, সেসব খতিয়ে দেখতে সরকার আগেই একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই প্রক্রিয়াতেই ঐ গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন,‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কোন কথা যদি লেখায় থাকে ,অবশ্যই আমাদের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। আমি একজন মুসলমান। এখন নবী করিম সা: সম্পর্কে কেউ যদি আজেবাজে কথা লেখে, আমরাতো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ হয়তো ধর্ম না মানতে পারে,তার মানে এই না যে তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলবে। নোংরা কথা লিখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে ,সমান অধিকার। এবং প্রত্যেক ধর্মের মর্যাদা রক্ষা করা। কেউ একটা ধর্ম সম্পর্কে যা খুশি লিখবে,এটা ধর্ম নিরপেক্ষতা নয় । সমালোচকরা সঠিক কাজ করছেন না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলছিলেন,‘নবী করিম সা: সম্পর্কে কেউ যদি আজে বাজে কথা লেখে,তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমি অন্যের কথা শুনলাম,মোটেই না। আমি নিজেও ধর্মে বিশ্বাস করি। কাজেই আমার নিজেরও অনুভূতিতে আঘাত লাগে। কেউ যদি বাজে কথা লেখে। তবে হেফাজতে ইসলামের অন্যতম দাবি হচ্ছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে ব্লাসফেমির আদলে নতুন আইন করা। তা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে আইনে অভাব নেই। তথ্য প্রযুক্তি আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং ফৌজদারি বিধিতেও বিষয়টাতে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কাজেই নতুন আইনের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি মনে করেন। হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচি নিয়ে সরকারের দিক থেকে এরআগে জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্র শিবিরকে জড়িয়ে নানান আশংকার কথা তুলে ধরা হয়েছিল। সে প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,‘ইতিমধ্যেই দেখেছেন, ১৮দলের পক্ষ থেকে মঞ্চে গিয়ে সমর্থন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আশংকা অমূলক ছিল না। তবে আমি ধন্যবাদ জানাবো যে, হেফাজতে ইসলাম কিছু কর্মসূচি নিলেও তারা যথারীতি তাদের সমাবেশ শেষে ফিরে গেছে। জামায়াতের ফাঁদে পা দেয়নি ‘ ইসলাম ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা-এই দুইভাগে দেশের মানুষ বিভক্ত নয় বলেও তিনি মনে করেন। তিনি উল্লেখ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষ-বিপক্ষ,এই দু’টি ভাগ বা ধারা কাজ করছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবিতে আন্দোলন করছে, সে ব্যাপারে বিরোধীদলের সাথে আলোচনার প্রশ্নে তিনি পুরনো অবস্থানই তুলে ধরেছেন। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, বিরোধীদল সংসদে এসে দাবি তুলে ধরতে পারে। একই সাথে ঐ দাবি নাকচ করে দিয়ে তিনি বিরোধীদলের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী দেশকে সেই ২০০৭ সালের পরিবেশে কেন নিতে চাইছেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে কিনা, এনিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘উনি যদি আশা করে থাকেন যে কিছু মানুষ খুন করলেই। একেবারে আর্মি ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর উনাকে ক্ষমতায় নেবে । বর্তমান আর্মি তা করবে না। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনেক মানুষ হতাহতের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে বিরোধীদল সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে।  এমন অভিযোগ নাকচ করে তিনি বিরোধীদলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।

No comments

Powered by Blogger.