পুলিশসহ আহত ২- হরতালে হেফাজত-আ’লীগ সংঘর্ষ, টিয়ার শেল

হেফাজত ইসলাম ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিবর্ষণসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পালিত হচ্ছে হরতাল।
হেফাজতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিচ্ছিন্ন পিকেটিং, মিছিল-সমাবেশ চললেও নগরীর অন্যান্য এলাকা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের খবর পাওয়া গেছে।
হরতাল শুরুর পর নগরীতে সকাল পৌনে ১১ টার দিকে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় হেফাজতের নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাংচুর শুরু করলে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের সময় পুলিশ কর্মকর্তাসহ দু’জন আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে অবস্থান করে দেখা গেছে, হরতাল শুরুর পর নগরীর লালখানবাজার মোড়ে সড়কের একপাশে হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা অংশ নেয়। আগেই সড়কের অপর পাশে অবস্থান নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এফ আই কবির মানিকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে এক পর্যায়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি হলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় হেফাজতের নেতাকর্মীরা একটি টেম্পু ভাংচুর করে এবং পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিকে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
এসময় ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাক আহমেদ। পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখম হন সালাহউদ্দিন নামে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ কর্মী।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ হেল বাকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝ থেকে দু’পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের উপর কারা হামলাসহ সার্বিক বিষয় আমরা তদন্ত করে দেখব।’
তবে প্রায় আধাঘণ্টা সংঘর্ষের পর বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। হেফাজতের নেতাকর্মীরা ওয়াসার মোড়ে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লালখান বাজার মোড়ে অবস্থান নিয়েছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘নগরীতে প্রায় দু’হাজার পুলিশ মোতায়েন আছে। ছয় সেকশন বিজিবিও আমরা মোতায়েন করেছি। আশা করছি যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আমরা কঠোরভাবে দমন করতে পারব।’
হরতাল শুরুর পর হাটহাজারীতে হেফাজতের আমির আহমদ শফীর দারুল উলুম মঈনুল মাদ্রাসার সামনের এলাকা, সদর বাসস্ট্যান্ডে এবং কাটিরহাট এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা সড়কের উপর অবস্থান নেন। তাদের অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়া হাটহাজারী উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাটসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সকালে সদরে কিছু দোকানাপাট খোলার চেষ্টা হলেও হেপাজতের নেতাকর্মীরা চাপ প্রয়োগ করে সেগুলো বন্ধ করে দেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) ফরিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘হেফাজতের নেতাকর্মীরা সড়কের উপর শান্তিপূর্ণভাবে বসে আছেন। যেহেতু তারা কোন ভায়োলেন্স করছেন না আমরাও তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে কোন বাধা দিচ্ছিনা।’
দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে শুধু চন্দনাইশের দোহাজারি ও মুজাফফরাবাদে স্থানীয় মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় জামায়াত-শিবিরের কিচু নেতাকর্মী সড়কে হরতালের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
চন্দনাইশ থানার ওসি খালেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দোহাজারি ও মুজাফফরাবাদে কয়েক’শ হরতাল সমর্থক আছেন। তারা রাস্তার একপাশে বসে আছেন। পাশ দিয়ে সিএনজি অটোরিক্সা, রিক্সা চলাচল করলেও তারা বাধা দিচ্ছেন না।’
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাস, অটোরিক্সা, হিউম্যান হলারসহ প্রচুর পরিমাণে যানবাহন নগরীতে চলাচল করছে। নগরীতে দোকানপাট, সরকারী-বেসরকারী অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা খোলা আছে। তবে ‍অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।

No comments

Powered by Blogger.