পকেটভারির জন্য বসে আছে নিজস্ব বিমান, চলছে ভাড়ারগুলো- বিমান সমাচার by ফিরোজ মান্না

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব উড়োজাহাজ বসিয়ে রেখে লিজে নেয়া উড়োজাহাজ দিয়ে ফাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে লিজে নেয়া উড়োজাহাজ দিয়ে ফাইট পরিচালনা করলে কর্মকর্তাদের পকেট ভারি হয়।
নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে ফাইট পরিচালনা করলে নিজেদের লাভের পরিমাণ কমে যায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হজ ফাইট পরিচালনার জন্য দু'টি উড়োজাহাজ লিজ নিয়েছিল। এর একটি হচ্ছে ওরিয়েন থাই এয়ারওয়েজের, অন্যটি নাইজিরিয়ার ক্যাবো এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ। এ দু'টি এয়ারওয়েজের চুক্তি শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ক্যাবোর উড়োজাহাজ শাহাজালাল বিমানবন্দরে বসিয়ে রেখে ভাড়া গোনা হচ্ছে। এটি এখন বিমানের জন্য গলার কাঁটা হলেও বিশেষ মহলকে খুশি করতেই উড়োজাহাজটি রাখা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বিমান ক্যাবো এয়ারলাইসেন্সের সঙ্গে ৫ হাজার ৩শ' মার্কিন ডলারপ্রতি ফায়িং আওয়ার হিসেবে লিজ নেয়। এই হিসেবে জেদ্দা যাতায়াতে উড়োজাহাজটিকে প্রায় ১০ ঘণ্টা ফায়িং করতে হবে। চুক্তি মোতাবেক হজ ফাইট শুরম্নর দিন থেকে ফায়িং আওয়ার শুরম্ন হয়েছিল। হজ ফাইট শেষে উড়োজাহাজটি ফেরত দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে উড়োজাহাজটি দিয়ে মাসে এক-দু'টি ফাইট পরিচালনা করে বাকি সময় বসিয়ে রেখে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এখান থেকে বিরাট একটি অংশ কর্মকর্তাদের পকেটে যাচ্ছে বলে খবর মিলেছে। একটি বিশেষ মহলকে খুশি করার জন্য ক্যাবো এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি হজ ফাইটের জন্য লিজ নেয় বিমান। লিজ নেয়ার পেছনে বিমানের কতিপয় কর্মকর্তার স্বার্থও জড়িত রয়েছে। উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়ার জন্য নাইজিরিয়া সিভিল এ্যাভিয়েশনের কোন অনুমতি নেই। ফলে যে কোন দেশের আকাশসীমার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজটি উড়ে যেতে পারবে না। এরপরও বিমান উড়োজাহাজটি হজ ফাইটের জন্য লিজ নিয়েছিল। এই উড়োজাহাজটি বসিয়ে রেখে বিমানের প্রতিদিন কয়েক হাজার ডলার ৰতি হচ্ছে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বিমান ৬টি উড়োজাহাজ লিজে চালাচ্ছে। এর মধ্যে বোয়িং-৭৭৭ একটি, বোয়িং-৭৩৭ দুটি এবং এয়ারবাস তিনটি রয়েছে। এছাড়া বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজ রয়েছে, ৮টি উড়োজাহাজ সচল রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি ডিসি-১০, দু'টি এয়ারবাস ও দু'টি এফ-২৮। নানা অজুহাতে এই উড়োজাহাজগুলো দিয়ে ফাইট পরিচালনা কম করা হচ্ছে।
বিমান বলছে, ১৯৮৩ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স থেকে তিনটি ডিসি-১০ উড়োজাহাজ কেনা হয়েছিল ৪৬২ কোটি টাকায়। পরে ১৯৮৯ সালে আরও একটি পুরনো ডিসি-১০ উড়োজাহাজ কেনা হয়। ১৯৭৭ সালে চারটি এফ-২৮ উড়োজাহাজ কেনা হয়েছে। এত বছরের পুরনো উড়োজাহাজ দিয়ে ফাইট পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ আধুনিক প্রজন্মের উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার আগে এগুলো দিয়েই ফাইট পরিচালনা করা হয়েছে। এই ৮টি উড়োজাহাজ চালানোর জন্য পাইলট রয়েছে ১১৯ জন। অথচ দরকার ১৬০ পাইলট। ৪১ পাইলট বাইরে থেকে আনতে হলে বিমানকে বিশাল অঙ্কের বেতন ভাতা গুনতে হবে। বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ পরিচালানার জন্য পাইলট, ক্রু, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন সেক্টরে দৰ জনবল বিমানের নেই। এর আগে বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য আমেরিকার বোয়িং কোম্পানি থেকে কয়েক জনকে প্রশিৰণ দিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু বিমান বোয়িং-৭৩৭ না এনে ৭৭৭ উড়োজাহাজ লিজ নিয়েছে। এখন ৭৭৭ চালাতে উপযুক্ত প্রশিৰণ দিতে হবে। এমনিতেই বিমানের পাইলট সঙ্কট রয়েছে। এখন ৭৭৭ চালাতে প্রথম পর্যায়ে বাইরে থেকে কয়েক জন পাইলট, ক্রু ও প্রকৌশলী আনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বিমানের পাইলট, ক্রু ও প্রকৌশলীরা কাজ করবেন। এখান থেকেও দৰ জনবল তৈরি হবে। এছাড়া কয়েক পাইলট, ক্রু ও প্রকৌশলীকে বোয়িং কোম্পানিতে প্রশিৰণের জন্য পাঠানো হবে।
এদিকে আনত্মর্জাতিক সিভিল এ্যাভিয়েশনের (আইকাও) বাংলাদেশ সিভিল এ্যাভিয়েশনকে 'সিগনিফিকেন্ট সেফটি কনসার্ন (এসএসসি) তালিকাভুক্ত করেছে। আইকাও সিভিল এ্যাভিয়েশনকে দেয়া এক চিঠিতে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। সিভিল এ্যাভিয়েশনের নাম এসএসসি তালিকা থেকে নাম কাটা গেলে বিমান আর ইউরোপের আকাশে উড়তে পারবে না। ইউরোপীয় এ্যাভিয়েশন এজেন্সি একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে সিভিল এ্যাভিয়েশনকে একটি রোডম্যাপ দিয়ে গেছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী সিভিল এ্যাভিয়েশনের উন্নয়ন না হলে বিমানের পৃথিবী আরও ছোট হয়ে যাবে। এসএসসি বহাল থাকলে উড়োজাহাজ ইউরোপের 'স্কাইস্পেস' ব্যবহার করতে পারবে না। বর্তমানে বিমান রোম ও লন্ডনে ফাইট পরিচালনা করছে।

No comments

Powered by Blogger.