রিপন হত্যা ॥ যশোর আ'লীগের দু'গ্রুপে কাদা ছোড়াছুড়ি- ৭ আসামি ২ দিনের রিমান্ডে

ছাত্রলীগ নেতা রিপন হত্যাকাণ্ডে নিয়ে আওয়ামী লীগের দু'গ্রুপের মধ্যে এখনও কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। একে অপরের বিরুদ্ধে করছে বিষোদ্গার। বুধবার জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, এই হত্যার সঙ্গে জড়িতরা খালেদুর রহমান টিটোর কাছের লোক।
আর তার পাশে রয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া ব্যক্তিরা। তারা দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। যশোর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে টানা দু'দিন সহিংস ঘটনা ঘটার পর এখনও শহর ও শহরতলি এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অন্যদিকে সম্মেলনের রাতে আওয়ামী লীগ অফিস ও তার আশপাশে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ গ্রেফতার করেছেন ৭ জন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে।
ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষের জের হিসেবে রিপন হত্যার ব্যাপারে অবশেষে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও মুখ খুলেছেন। বুধবার দুপুরে যশোর প্রেসকাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি আলী রেজা রাজু দলের বর্তমান এমপি খালেদুর রহমান টিটোর কঠোর সমালোচনা ও তাঁর বিরম্নদ্ধে বিষোদ্গার করেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রোপট তুলে ধরে বলেন, শনিবার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শানত্মিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের জন্য শুরম্ন হয় ভোটগ্রহণ পর্ব। একটি উপজেলার ২৫ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটও দেন। কিন্তু টিটোর সমর্থক প্যানেল যখন বুঝতে পারে প্রতিপ বিজু-ফয়সাল প্যানেলের বিজয় নিশ্চিত, তখনই নিচ থেকে শুরম্ন হয় একের পর এক বোমা হামলা। কারা এই বোমা হামলা চালিয়েছে তা আজ স্পষ্ট। তারা শুধু বোমা হামলা চালিয়েই ানত্ম হয়নি, ছাত্রলীগ নেতা রিপনকেও হত্যা করেছে। আহত করেছে আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল আজিজ তপুসহ আরও অনেককে। এ ঘটনায় পৃথক দু'টি মামলা হয়েছে। মামলায় আসামিদের নামও উলেস্নখ করা হয়েছে।
আলী রেজা রাজু এমপি টিটোর বিরম্নদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগকে কখনই গ্রহণ করতে পারেননি। তার সঙ্গে কিছু দেউলিয়া রাজনীতিক ও সন্ত্রাসী ছাড়া আর কেউ নেই। তিনি চলছেন বিএনপির লোকজন নিয়ে। তার কাজই হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা। ইতোপূর্বে বহু জায়গায় টিটো এ কথা বলেছেন। তিনি জামায়াতে ইসলামী বাদে এর আগে সব দলেই ছিলেন। কিন্তু কোন দলেই তার ঠাঁই হয়নি। সর্বশেষ এসেছেন আওয়ামী লীগে। যারা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করেন, তারা কেউ টিটোর সঙ্গে নেই। তিনি সন্ত্রাসের বিরম্নদ্ধে কথা বললেও সন্ত্রাসীরা তার হয়েই কাজ করছে। ইতোপূর্বে যশোর পৌরসভার নির্বাচনে সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে টিটো চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এ ছাড়া '৮৬ সালের নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মাধ্যমে তিনি এমপি হন। কিন্তু টিটো আজ এসব কথা ভুলে গেছেন। তাঁর বিরম্নদ্ধে এ ধরনের বহু নজির রয়েছে। কিন্তু তা বলতে গেলে দলেরই তি হবে। রাজু বলেন, যশোরে যা ঘটছে তা দলীয় সভানেত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। নেত্রী যে পদপে নেবেন আমরা তাই মেনে নেব।
আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল আজিজ তপুকে ছুরিকাহত ও ছাত্রলীগ নেতা রিপন হত্যার ব্যাপারে পৃথক দু'টি মামলা হলেও পুলিশ এখন পর্যনত্ম কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে শনিবার ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষে সন্ধ্যায় ভোটগ্রহণকালে বোমাবাজির ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার রাতে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এরা হলো শহরের খড়কি এলাকার আনোয়ার কবির, মাহফুজুর রহমান মিন্টু, বেজপাড়ার শরিফুল, চাঁচড়া রায়পাড়ার জাহাঙ্গীর আলম, ঘোপের সোহেল গুলু্ল, কামাল হোসেন ও সদর হাসপাতাল এলাকার নাসিম। এর মধ্যে আনোয়ার কবির, সোহেল গুলু, কামাল হোসেন, নাসিম, শরিফুল ও জাহাঙ্গীর আলমকে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ ফারম্নক হোসেনের আদালতে হাজির করে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে ম্যাজিস্ট্রেট ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিন ব্যাপক গুলি ও বোমাবাজি, পরদিন ছাত্রলীগ নেতা রিপন হত্যাকাণ্ড ও আওয়ামী লীগ নেতা তপুসহ আরও কয়েকজন ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনার পর সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। বুধবারও শহর ও শহরতলিতে পরিস্থিতি ছিল থমথমে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মতাসীন দলের দু'গ্রম্নপের মধ্যে সংঘাতের কারণে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

No comments

Powered by Blogger.