জামায়াত সমর্থকদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে- শাহবাগের সমাবেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি

রাজধানীর শাহবাগে ‘প্রজন্ম চত্বর’ সমাবেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
একই সাথে ইবনে সিনা, নয়া দিগন্ত, দৈনিক আমার দেশ, ইসলামী ব্যাংক, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভি ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকি দেন আন্দোলনকারীরা। এ দিকে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব বাতিল দাবি এবং জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ অভিহিত করা হয়। জামায়াতের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য বিরোধী দল বিএনপিকে দায়ী করা হয়। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির চতুর্থ দিনে আয়োজিত মহাসমাবেশে এসব দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। এ দিকে সমাবেশের নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের জন্য ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের দু’টি পানির ট্রাক এবং দু’টি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটও ছিল।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে ওই দিন থেকেই ‘ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক’ এ আন্দোলন শুরু করে।

বর্তমান মতাসীন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক বাম দলগুলোর কিছু নেতাকর্মীও আন্দোলনে যোগ দেন। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তির প থেকেও সংহতি জানানো হয়।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির আলোকে গতকাল বেলা ৩টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে মহাসমাবেশের আয়োজন করেন অবরোধকারীরা। হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার, মুজিবের বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই, ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করো, করতে হবে, রাজাকারের ঠিকানা পাকিস্তান আর গোরস্থান ইত্যাদি।

এর আগে অন্যান্য দিনের মতোই সকাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের স্লোগান, প্রতিবাদী গানসহ অন্যান্য পরিবেশনাও ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। দুপুরে লোকসমাগম কিছুটা কম থাকলেও বিকেলে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে শাহবাগ চত্বর। বেলা ৩টায় শাহবাগ মোড়কে ‘প্রজন্ম চত্বর’ অভিহিত করে সেখানে সমাবেশ শুরু হয়। সেখানে সমাবেশের শুরুতেই সমবেতভাবে জাতীয়সঙ্গীত পাঠ করা হয়। চরমপত্র পাঠ করেন ব্লগার শহীদুল ইসলাম রাজু। আন্দোলনের খবর কয়েকটি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে।

মহাসমাবেশে পর্যায়ক্রমে অনেকেই বক্তব্য রাখেন। শাহবাগ মোড়ে ‘রজনীগন্ধা’ ভাস্কর্যের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সেখানেই সমাবেশের কার্যক্রম চলে। মূলমঞ্চে অঞ্জন রায়ের উপস্থাপনায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ব্যক্তি বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক প্রাণগোপাল দত্ত, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, হাসান ইমাম, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, মেজর জেনারেল (অব:) কে এম শফীউল্লাহ বীর উত্তম, ড. জাফর ইকবাল, সাংবাদিক আনিসুল হক, আলতাফ মাহমুদ, ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল হাসান, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এস এম শুভ, সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তমাল প্রমুখ।

অবরোধের প্রথম তিন দিনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্য দিতে বাধা দিতে দেখা গেলেও গতকালের সমাবেশে বাম দলগুলোর সহযোগী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রায় সবগুলোর নেতাদের বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

সমাবেশে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ব্লগার ডা: ইমরান। তিনি লিখিত বক্তব্য শেষে সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান। দাবি আদায় না হলে অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে তিনি ঘোষণা করেন। তবে গতকাল সংগঠনটির প থেকে কোনো নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। ঢাবি ও জাবি ভিসিসহ অনেকেই তাদের বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা করেন।

লিখিত বক্তব্যের পর আগত সবাইকে শপথবাক্য পড়ানোর সময় ডা: ইমরান নয়া দিগন্ত, দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক সংগ্রাম, সোনার বাংলা ব্লগ বয়কটের আহ্বান জানান। একই সাথে অবরোধকারীরা রেটিনা, ফোকাসসহ কোচিং সেন্টারে শিার্থীদের কোচিং না করা এবং কারো সন্তানদের সেখানে না পাঠানোর অনুরোধ করেন। তিনি ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট না খুলতে এবং ইবনে সিনা থেকে কোনো সেবা না নিতে সবাইকে শপথ পাঠ করান। জামায়াত-শিবির পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন বয়কট করার আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ থেকে।

দেশকে যারা গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার হুমািক দিচ্ছে তাদেরকে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ডা: ইমরান।

সমাবেশের নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। হোটেল রূপসী বাংলার মোড়ে, আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে এবং শহীদ জিয়া শিশুপার্কের সামনে নিরাপত্তা চৌকি বসায় পুলিশ। তারা বারডেম হাসপাতালের ছাদে উঠে দুরবীন দিয়ে সমাবেশস্থল পর্যবেণ করে।

সমাবেশ এবং অবরোধ কর্মসূচিতে আসা সবাইকে ফ্রি খাবার সরবরাহ করছে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তারা আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে বিভিন্ন ট্রাকে করে খাবার নিয়ে এসে বিতরণ করছেন। এ ছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শাখার প থেকে ফ্রি চিকিৎসা পাচ্ছেন কর্মসূচিতে আগত লোকজন।

No comments

Powered by Blogger.