নির্বিচারে মানুষ হত্যায় জিহাদি হওয়া যায় না by এনা

কাজী মোহাম্মদ রিজওয়ানুল আহসান নাফিসের বোধোদয় ঘটেছে যে, নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে জিহাদি হওয়া যায় না।
আলকায়েদা যা করছে বা করেছে তা নিতান্তই সন্ত্রাস ও অমানবিক। নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দোষ স্বীকার করে ৭ ফেব্র“য়ারি ব্র“কলিন ফেডারেল কোর্টে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশী নাফিস। নাফিস আরো বলেছেন, স্টুডেন্ট ভিসায় গত বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগেই ওসামা বিন লাদেনের অনুসারী হই এবং যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সিদ্ধান্ত নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভিত তছনছ করতে চেয়েছিলেন নাফিসÑ এ কথাও স্বীকার করেছেন। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পেরেছেন, জিহাদের নামে মানুষ হত্যা করা উচিত নয়। নাফিস (২১) অনুতপ্ত এমন অপকর্মে প্রবৃত্ত হওয়ার জন্য। নিরীহ মানুষ হত্যার মাধ্যমে কখনোই জিহাদি হওয়া যায় না বলেও নাফিসের বোধোদয় ঘটেছে।

এ সময় জজ ক্যারল অ্যামন বিভিন্নভাবে ৩৩ মিনিটে বেশ কয়েকবার নাফিসকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘দোষ স্বীকার করলে তার কমপে ৩০ বছরের জেল এবং আড়াই লাখ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় দুই কোটি টাকা) জরিমানার আশঙ্কা রয়েছে। জেল খাটার সময় কোনো ধরনের প্যারলে মুক্তির সম্ভাবনা নেই। এমনকি, একবার দোষ স্বীকার করলে এই কোর্ট প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিলের দরজাও খোলা থাকবে না।’ নাফিস অত্যন্ত স্বাভাবিক কণ্ঠে প্রতিবারই জানান যে, তিনি বুঝেই দোষ স্বীকার করছেন। জজ ক্যারল অ্যামন আবারো জানতে চান, ‘শাস্তি কমিয়ে দেয়াসহ অন্য কোনো প্রতিশ্র“তি কেউ করেছেন বলেই তিনি দোষ স্বীকার করছেন কিনা, কিংবা দোষ স্বীকার না করলে ভয়-ভীতির আশঙ্কা রয়েছে কি না?’ জবাবে নাফিসের একই কথা, ‘জী না। আমি নিজে থেকেই অনুধাবনে সম হয়েছি যে কৃতকর্মের জন্য দোষ স্বীকারই শ্রেয়।’

নাফিস কারাগারের পোশাক পরে কোর্টে এসেছিলেন। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। তবে স্যাম্পো করেছেন এবং বেশ পরিপাটি ছিলেন সারাণ। কোনো ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কিংবা সঙ্কোচ পরিলতি হয়নি একবারো। ইংরেজিতে তিনি কথাও বলেছেন চমৎকারভাবে। শুনানির সময় কোর্ট এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়। কোর্টে বাংলাদেশের কূটনীতিক কিংবা অন্য কাউকে দেখা যায়নি।

গত বছরের ১৭ অক্টোবর নাফিসকে এফবিআইসহ জয়েন্ট টেরোরিস্ট টাস্কফোর্সের লোকজন গ্রেফতার করে সেলফোনের বোতাম টিপে (রিমোট কন্ট্রোল) বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি উড়িয়ে দেয়ার সময়। গাড়িটি রাখা হয়েছিল ডাউনটাউন ম্যানহাটানে রিজার্ভ ব্যাংকের সামনে। সেই গাড়িতে সত্যিকারের বিস্ফোরক ছিল না বিধায় তা ফাটেনি। নাফিস জয়েন্ট টেরোরিস্ট টাস্কফোর্সের ফাঁদে পড়েছিলেন।

দোষ স্বীকারের পর এ মামলার সরকারি আইনজীবী (ইউএস অ্যাটর্নি) লুনম জেমসকে পাশে রেখে অপর ইউএস অ্যাটর্নি লরেটা ই লিঞ্চ ফেডারেল কোর্টের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান চোখ-কান খোলা রেখে নিউ ইয়র্ক তথা আমেরিকার নিরাপত্তায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে নাফিসের আইনজীবী (সরকার প্রদত্ত) ফেডারেল ডিফেন্ডার হেইডি সিজার বলেন, ‘নাফিস সবকিছু বুঝে নিজে থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

নাফিসের জেল-জরিমানার তথ্য জানানো হবে মে মাসের শেষ সপ্তাহে। এর আগে দোষ স্বীকারের যাবতীয় তথ্য রেকর্ড করা হবে উভয়পরে সম্মতিসাপে।

No comments

Powered by Blogger.