প্রবাসের খবরঃ যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে এ প্রহসন জনগণ মানে না

যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে আওয়ামী লীগ দেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর সুগভীর ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে জাতীয় জাগরণ ও প্রতিরোধে দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সেইভ বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ।
গত বুধবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এ আহ্বান জানানো হয়। সেইভ বাংলাদেশের সমাবেশে রাজনীতিবিদ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার নেতৃবৃন্দ একাত্মতা ঘোষণা করেন।

বিশিষ্ট আইনজীবী সেইভ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এই বিচার যেন আন্তর্জাতিক মানের হয় সেই দাবি গোটা বিশ্বের সব মানবাধিকার সংগঠনেরই নয়, এখন ইউরোপ-আমেরিকা-মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার হলে আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানাবে সবাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে বিচারের নামে ধোঁকা দিতে চায়। তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে এমন কথা লিখে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে একটি গণতান্ত্রিক দলকে টার্গেট করেছে।

হাফেজ মাওলানা কারি আশরাফুল ইসলামের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা ইউরোপের আমির মুফতি শাহ সদর উদ্দিন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মালিক, কমিউনিটি লিডার আলহাজ আতিকুর রহমান জিলু, প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ড. শামসুদ্দিন আহমদ খান, খেলাফত মজলিস ইউকের আমির অধ্যাপক আব্দুল কাদির সালেহ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান আহমদ, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা আব্দুল হাই, বাংলাদেশ ওলামা কাউন্সিলের সভাপতি এস কে এম শাহজাহান, বাংলাদেশ সলিডারিটি ইউকের সভাপতি নুর বক্স, ফ্রি সাঈদী ফেডারেশনের চেয়্যারম্যান আখতার হোসেন কাওসার, চারদলীয় ঐক্যজোট কানাইঘাট উপজেলা শাখার সাবেক সেক্রেটারি ও ইসলামিক ফোরাম নেতা সৈয়দ জামাল আহমদ, জাতীয়তাবাদী ওলামা দল ইউকের সভাপতি মাওলানা শামীম আহমদ, ছাত্রনেতা বদরে আলম দিদার, শ্রমিক দল সভাপতি সুহেল আহমদ সাদিক, ছাত্রদল নেতা রাজিব আহমদ খান, মাওলানা রেজাউল করিম প্রমুখ।



যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিােভ : প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি : ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও করেছে প্রবাসীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ও বার্মিংহামে হাইকমিশনের সামনে পৃথক পৃথকভাবে বিােভ সমাবেশ করে হাজার হাজার প্রবাসীরা। তারা আবদুল কাদের মোল্লার ব্যাপারে অন্যায় রায় বাতিল করে তাকেসহ সব নেতৃবৃন্দের মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ওয়াশিংটন ডিসি : স্থানীয় সময় ৬ ফেব্র“য়ারি বেলা ১১টায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বিােভ করেছে ফোরাম ফর ডেমোক্র্যাটিক রাইটস ইন বাংলাদেশ (এফডিআরবি)। বিােভ শেষে তারা রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে তারা তিন দফা দাবি পেশ করেন। প্রথম দাবি হচ্ছে, কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে বিরোধী মত দমনের বিচার বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংগঠিত সব যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিষয়ে তদন্তের জন্য জাতিসংঘ অনুমোদিত আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করতে হবে। তৃতীয় দাবি হচ্ছে, যদি এই কমিশন অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে সাবেক যুগোস্লাভিয়া বা রুয়ান্ডার মতো জাতিসঙ্ঘ অনুমোদিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আবদুল কাদের মোল্লার রায় প্রসঙ্গে স্মারকলিপিতে বলা হয়, এতে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। আবদুল কাদের মোল্লা সম্পূর্ণ নির্দোষ।

স্মারকলিপি দেয়ার আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি আবদুল মান্নান। বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মোহাম্মদ তাহের, শরীফুল ইসলাম শিকদার, আবদুল আউয়াল, মাহমুদুল কবির প্রমুখ।

ম্যানচেস্টারে সমাবেশ : হাসিনা সরকারের চরম মিথ্যাচার, জুলুম, প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে হত্যা ও আলেমদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন, অন্যায় রায়সহ সব রাজবন্ধীদের মুক্তির দাবি ও ক্যাঙ্গারু ট্রাইব্যুনাল বন্ধের দাবিতে ম্যানচেস্টারের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে সেইভ বাংলাদেশের ব্যানারে গত ৫ ফেব্র“য়ারি এক বিশাল বিােভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মুহুর্মুহু সরকারবিরোধী স্লেøাগানের মধ্য দিয়ে গ্রেটার ম্যানচেস্টার ও ব্রাডফোর্ডসহ আশপাশের বিভিন্ন শহর থেকে অসংখ্য মানুষ এতে উপস্থিত হন। এতে বক্তব্য রাখেন ওল্ডহাম বাংলাদেশ সোসাইটি, ম্যানচেস্টার নাগরিক সমিতি, প্রজন্ম বাংলাদেশ, সাঈদী মুক্তি পরিষদ, বিভিন্ন সংস্থা ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দসহ ১৮ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

বক্তারা সম্প্রতি বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ওপর অন্যায় রায়ের কড়া সমালোচনা করেন এবং অনতিবিলম্বে মাওলানা নিজামী, গোলাম আযম, মাওলানা সাঈদীসহ সব রাজবন্ধীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

নোমান আহমেদের সভাপতিত্বে ও মাওলানা শরীফ হুসাইনের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন, রমজান খান, সাজিয়ান আহমেদ, ফজল হক চৌধুরী, শফিকুল হোসাইন, আজিজুল হক, মুশফিক শাহজাহান চৌধুরী, হাফিজ নজরুল ইসলাম, আব্দুল মালিক, আফসার আহমেদ চৌধুরী, মঞ্জুর আহমদ, মাওলানা ইখলাসুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো অনেকে।

বিােভ সমাবেশ-উত্তর সেইভ বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ম্যানচেস্টারের বাংলাদেশ হাইকমিশনে একটি স্মারকলিপি দেয়।

৪ শহীদের মাগফিরাত কামনায় নিউ ইয়র্কে দোয়া মাহফিল : নিউ ইয়র্ক থেকে সংবাদদাতা জানান, গত মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামী আহূত হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে চট্টগ্রামে শাহাদতবরণকারী জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে নিউ ইয়র্কে।

সাবেক ছাত্রনেতাদের আয়োজিত দোয়া মাহফিলের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্রনেতারা বলেন, মিছিল-মিটিং করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। প্রকাশ্যে মিছিলকারী জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের হত্যা আওয়ামী-বাকশালী সরকারের স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী আচরণের নগ্ন প্রকাশ।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার ব্রুকলিনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাওলানা দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল আরিফ। বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা নঈমুদ্দিন, আলম চৌধুরী, শহীদ খুকু মনির, রেজাউল করিম সিদ্দিকী, আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবু ওবায়দা। মুনজাত পরিচালনা করেন মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন।

চলমান জামায়াত শিবিরের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তারা বলেন, হত্যা করে বাংলাদেশ থেকে ইসলামি আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। রক্ত ও জীবন দিয়ে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লাখো ইসলামি জনতা প্রস্তুত রয়েছে।

শাহবাগের সমর্থনে নিউ ইয়র্কে বিােভ : এনা নিউ ইয়র্ক  থেকে জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্তদের ফাঁসির দাবিতে নিউ ইয়র্কে গত দু’দিন ধরে স্বতঃস্ফূর্ত বিােভ চলছে রাজধানী ঢাকার শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের সমর্থনে। সাত ফেব্র“য়ারি সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল) নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে খাবার বাড়ির সামনে ‘ঘাতকদের ফাঁসি চাইÑআর কোনো দাবি না’ স্লোগানে সমবেত হন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের বিশাল একটি পতাকার মধ্যে ‘একাত্তর’ লেখা ব্যানার এবং ঘাতকদের ছবি সংবলিত পোস্টার নিয়ে সবাই অংশ নেন। এ কর্মসূচির প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্্র মুক্তিযোদ্ধা যুবকমান্ডের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী। তাকে সহায়তা করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রজন্ম একাত্তর, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা। এর আগের দিন একই স্থানে আরেকটি বিােভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট জেনোসাইড অ্যান্ড ওয়্যার ক্রাইমস ব্যানারে।

শেখ হাসিনা মঞ্চ, স্বাধীনতা চেতনা মঞ্চ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এফবিসিডিআই, বঙ্গবন্ধু প্রচার কেন্দ্র ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউ এস কমান্ডের সহযোগিতায় এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হোস্ট সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. প্রদীপ কর। পরিচালনা করেন মহাসচিব হেলাল মাহমুদ।

শনিবার এবং রোববারও বিােভ-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে প্রবাসীরা।

No comments

Powered by Blogger.