খেজুরের গুড়ের নামে আমরা কী খাচ্ছি! by মোঃ শহীদুল হক সরকার

নাটোরের লালপুর, বাগাতিপাড়া ও পাশের বাঘা উপজেলায় সুগার মিলের চিটা লালিগুড়, ভারতের মেয়াদ উত্তীর্ণ চিনি ও হাজার পাওয়ারের রঙ মিশিয়ে জ্বাল করে বানানো হচ্ছে খেজুরের গুড়ের পাটালি।
এসব গুড়ের রঙ ভালো করতে তৈরির সময় দেয়া হচ্ছে প্রচুর তিকারক হাইড্রোজ ও ফিটকারি। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নিয়মিত এসব বানাছেন এবং আরেক শ্রেণীর ব্যবসায়ী প্রতিদিন ট্রাকে করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিয়ে এসব গুড় বিক্রি করছেন। দেশের একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিত করলেও এখন পর্যন্ত দু-একটির বেশি অভিযান চালানো হয়নি। স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই এ কারবার চলছে বলে জানান স্থানীয়রা।

বাঘা উপজেলার খদ্দবাওশা গ্রাম, লালপুরের দুয়ারিয়াসহ প্রায় পুরো উপজেলা ও বাগাতিপাড়া উপজেলার জিগরী ও মুরাদপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম এবং নাটোর সদরের ছাতনীতে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব এলাকার অর্থলোভী একশ্রেণীর মানুষ সম্পূর্ণ ব্যবসায়িকভাবে নাটোরের দু’টি সুগার মিল থেকে বছরের শুরুতেই সংগ্রহ করেছে বিপুল চিটাগুড় আর ভারত থেকে কম দামে আমদানি করা মেয়াদ উত্তীর্ণ খাওয়ার অনুপযোগী চিনি। শীত মওসুম শুরুর সাথে সাথে এরা খেজুরের সামান্য রসের সাথে চিটাগুড় আর ভারত থেকে আমদানি করা মেয়াদ উত্তীর্ণ নষ্ট চিনি জ্বাল করে তৈরি করছে খেজুরের পাটালি।

গতকাল লালপুরের দুয়ারিয়া ও ফুলবাড়ী ও বাগাতিপাড়ার মুরাদপুর গ্রামে গেলে স্থানীয়রা জানান, বছরের শুরু থেকে এবার তারা খেজুরের অল্প রসের সাথে বস্তা বস্তা চিনি মিশিয়ে গুড় বানাচ্ছেন। তারা জানান, তির বিষয়টি তারা জানেন না, বেশি লাভের আশায় তারা এটি করছেন। এখন গুড়ের দাম কমে যাওয়ায় চিনি মেশানো কমে গেছে এবং শুধু সীমান্ত এলাকার লোকেরা ভারতের পচা চিনি ও গরুকে খাওয়ানোর চিটা লালিগুড় মিশিয়ে খেজুরের গুড় বানায় বলেও তারা দাবি করেন।

বড়াইগ্রামের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সম্প্রতি এক অভিযানে উপজেলার বনপাড়া বাজার থেকে জব্দ করা পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের এমন ২১০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড় স্থানীয় আহম্মেদপুরে নন্দকুজা নদীতে ফেলেছেন। এ ঘটনায় গুড়ের আড়তদার ও অন্যদের ভোক্তাসংরণ আইনে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেছেনÑ ভেজাল ও বিভিন্ন রাসায়নিকদ্রব্য মিশ্রিত গুড় খেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে ভোক্তা অধিকার সংরণ আইনে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মতিউর রহমান বলেছেন, দীর্ঘ সময় এমন ভেজাল খাদ্য খেলে যেকোনো মানুষের ক্যান্সার হতে পারে। এ ছাড়া  দু-চারবার খাওয়ার ফলে লিভারে সমস্যা এবং জন্ডিস, হেফাটাইটিস ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব ভেজাল গুড় তৈরি ও বিক্রি করছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নেয়া আপেল মাহমুদ নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বিষয়টি তার নজরে এসেছে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো: জাফর উল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেছেন, মানুষ শুধু অর্থের লোভে এমনটি করছে ভাবা যায় না। এদের ফাঁসি হওয়া উচিত। তিনি দ্রুত নাটোরের এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

No comments

Powered by Blogger.