তৃণমূল আ’লীগে ভয়াবহ কোন্দল by ফজলুল হক শাওন

কমিটি গঠন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তৃণমূল আওয়ামী লীগে আন্তঃদলীয় কোন্দল ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
কেন্দ্রের নির্দেশের পরও সারা দেশে তৃণমূল আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব, সঙ্ঘাত, দলাদলি বেড়েই চলেছে। দলের মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপির সাথে দলের উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। কেন্দ্রের নির্দেশে সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও  বেশির ভাগ স্থানে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে মারামারি, সংঘর্ষ ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। কোথাও কোথাও দুই গ্রুপ দু’টি কমিটি গঠনের ঘটনাও ঘটছে।

সম্প্রতি পটুয়াখালী শহর আওয়ামী লীগের পৃথক সম্মেলনের মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ভাগ হয়ে যায় শহর আওয়ামী লীগ। দুই গ্রুপই ঘোষণা দিয়েছে তাদের কমিটি। সভাপতি গ্রুপে মো: শাহজালাল খান সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর ছেলে অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জাম মনি। আবার সাধারণ সম্পাদক গ্রুপে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন পটুয়াখালী পৌরমেয়র ডা: মো: শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে গাজী হাফিজুর রহমান পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। একইভাবে সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কমিটি গঠন নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ ও কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহীর পুঠিয়ায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এ ছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেও অনেক ঘটনা ঘটছে। আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে শরীয়তপুর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় দলের মধ্যে গুলির ঘটনাও ঘটেছে। কাপাসিয়া যুবলীগ ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আধিপত্য বিস্তার ও কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন  ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি এলাকায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে যারা সরকারের মন্ত্রী ও দলের এমপি আছেন তাদের অনেকেই দলের নেতাকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করছেন। এমপি মন্ত্রীর কথামতো কাজ না করায় তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীকে জেল খাটতে হয়েছে। অনেকে নিজ দলের প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। নিজ দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে এমন আচরণে দলের অনেক নেতাকর্মী ুব্ধ হয়েছেন। অনেকে অভিমান করে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। মন্ত্রী এমপিদের দাপট, দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ, নিজ দলের নেতাদের প্রতিপক্ষ সৃষ্টি করে তাদের সাথে মারামারি ও সংঘর্ষে অনেক স্থানেই তৃণমূল আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক অবস্থা খুব খারাপ।

দলের এ অবস্থার কথা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করে সম্প্রতি দলের সংসদীয় কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এমপিদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো মন্ত্রী কোনো এমপি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কেমন আচরণ করছেন, তার তালিকা আমার কাছে আছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জরিপ চালানো হয়েছে। প্রায় ৬০ জন এমপির বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নানা অভিযোগ রয়েছে। শুধু গোয়েন্দা সংস্থাই নয়। অনেক এমপির আচরণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে সরাসরি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসেছে। এ সম্পর্কে তিনি এমপিদের সাবধান হওয়ার আহ্বান জানান।

দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংসদীয় কমিটির সভায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের পিস্তল উঁচিয়ে ভয় না দেখিয়ে তাদের সাথে ভালো আচরণ করতে মন্ত্রী এমপিদের নির্দেশ দেন। তিনি মন্ত্রী এমপিদের উদ্দেশে বলেন, তৃণমূল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী না হলে আগামী নির্বাচনে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া খুব কঠিন হবে। সুতরাং নেতাকর্মীদের সাথে কোনোক্রমেই খারাপ আচরণ করা চলবে না। তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা আঁচ করতে পেরেই তারা এ নির্দেশ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলের শতাধিক আসনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি অথবা জামায়াতে ইসলামীর সাথে নয়, নিজ দলের নেতারা পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়ার পরও থামছে না তৃণমূল নেতারা।

তৃণমূলের এ অবস্থা সম্পর্কে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। বড় দলে কিছু সমস্যা থাকবেই। এটা অন্য বড় দলগুলোতেও রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.