মূল্যনিয়ন্ত্রণ ও মজুদ বিরোধী আইন গাফিলতির কবলে by মিজান চৌধুরী

আমলাদের গাফিলতির কারণে মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুদবিরোধী আইন শক্তিশালী হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দীর্ঘ ৫৭ বছর পর পুরনো আইনটি শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
কিন্তু সংশিস্নষ্ট ছয়টি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সহযোগিতার অভাবে আইনটি সংশোধন ও শক্তিশালীকরণ পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। সূত্র মতে, দ্য এসেন্সিয়াল আর্টিকেলস (প্রাইজ কন্ট্রোল এ্যান্ড এন্টি হোডিং) এ্যাক্ট ১৯৫৩ সালে প্রণয়ন করা হয়। গত ৫৭ বছরে আইনে কোন হাত দেয়া হয়নি। এ ধরনের একটি আইন প্রণয়ন করা হলেও আইনের মধ্যে কোথাও উলেস্নখ করা হয়নি কি পরিমাণ পণ্য গুদামে ধরে রাখলে মজুদ হিসাবে গণ্য হবে। কিংবা কত দিন পণ্য গুদামে রাখা হলে অবৈধ মজুদ হবে। এছাড়া ওই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক অর্থদ- দেয়া আছে ৫ হাজার টাকা। এসব কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনটি পুরো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, ১৯৫৩ সালের আইনে কোথাও বলা নেই কি পরিমাণ পণ্য রাখা হলে মজুদ হিসাবে চিহ্নিত হবে। ফলে ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ পণ্য গুদামে ধরে রাখবে পুরোটাই বৈধ। একে মজুদ আইনে মজুদদারি বলা যাবে না। ফলে সরকার ইচ্ছে করলেই অবৈধ মজুদদারি হিসাবে কাউকে চিহ্নিত করতে পারছে না। অথচ অসাধু কিছু ব্যবসায়ী আইনের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পণ্যের মজুদ করে দাম বাড়াচ্ছে। কোন কোন সময় বাজার অস্থিতিশীলের পিছনে মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকে মনে করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় বর্তমান আইনটি সংশোধন এবং আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দ্রব্যমূল্য সংক্রানত্ম আনত্মঃমন্ত্রণালয় মনিটরিং সভায় অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে দ্রম্নত মজুদবিরোধী আইন শক্তিশালী করার জোরালো প্রসত্মাব দেয়া হয়। এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে মতামত চেয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। ওই সিদ্ধানত্ম মোতাবেক গত ৩ ফেব্রম্নয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের ১০ দিনের সময় দিয়ে চিঠি প্রদান করে। চিঠিতে বলা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রানত্ম সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নির্দেশনার আলোকে দ্য এসেন্সিয়াল আর্টিক্যালস (প্রাইজ কন্ট্রোল এ্যান্ড এন্টি হোডিং) এ্যাক্ট ১৯৫৩ যুগোপযোগী করা সংক্রানত্ম কমিটি ২ ফেব্রম্নয়ারি বৈঠক করে। ওই বৈঠকের সিদ্ধানত্মের প্রেৰিতে ওই আইনের প্রতিটি ধারা ও উপধারার ওপর সুপারিশ আগামী ১০ দিনের মধ্যে কমিটির সভাপতির নিকট প্রেরণ করার অনুরোধ করা হলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দশ দিনের মধ্যে আইনের ওপর কোন সুপারিশ কোন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ১৭ ফেব্রম্নয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য সংক্রানত্ম আনত্মঃমন্ত্রণালয় মনিটরিং টিম সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য মজুদবিরোধী আইন দ্রম্নত শক্তিশালী করার প্রসত্মাব আনা হয়। ওই সভার পর নতুন করে সংশিস্নষ্ট সচিবদের আরও ৫ দিনের সময় দিয়ে আইনটি শক্তিশালী করতে ধারা উপধারার ওপর সুপারিশ চাওয়া হয়। ওই পাঁচদিন পরও কোন উত্তর পায়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে দ্রব্যমূল্য সংক্রানত্ম আনত্মঃমন্ত্রণালয় মনিটরিং টিমের সভাপতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোসত্মফা মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, এ পর্যনত্ম তিনটি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির উত্তর পাওয়া গেছে। বাকি তিনটি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর এই আইনটি সংশোধন ও শক্তিশালী করতে কাজ শুরম্ন হবে। তিনি বলেন, ১৯৫৩ সালে মজুদবিরোধী একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। দীর্ঘ ৫৭ বছরে ওই আইনের ওপর কোন হাত দেয়া হয়নি। বর্তমান প্রেৰাপটে আইনটি খুবই দুর্বল। যা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ফলে আইনটি যুগোপযোগী করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই আইনটি যুযোপযোগী করা হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ করে অবৈধ মজুদদারির বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.