ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার নির্দিষ্ট করার কথা বললেন ড. ইউনূস- গবর্নর বললেন ক্ষুদ্রঋণ চ্যারিটি নয়

কেউ বলছে ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার এক শ' শতাংশ নেয়া হচ্ছে। কেউ বলছে ২শ' শতাংশ পর্যন্ত। এই বিতর্ক নিষ্পত্তি করতে পারে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)।
এমআরএ বলে দিক ৰুদ্র ঋণের মানসম্মত সুদের হার কত হতে পারে। নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার ৰুদ্র ঋণের আন্তর্জাতিক সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সুদের হারের ব্যাপারে এমআরএর ভূমিকা মানুষের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে পারে।
অবশ্য উদ্বোধনের প্রথম দিনে সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ৰুদ্র ঋণের সুদের হার নিয়ে অসনত্মোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন এনজিও ৰুদ্র ঋণের ৰেত্রে উচ্চসুদের হার আদায় করছে।
তিন দিনব্যাপী ক্ষুদ্র ঋণের আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিকে শক্তিশালীকরণ, উচ্চ সুদের হার কমানো, ডায়নামিক মনিটরিং ব্যবস্থা, ৰুদ্র ঋণ খাত আরও সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন সুপারিশ ওঠে আসে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, যারা মাইক্রোক্রেডিট সম্পর্কে দোষ দেয় তারা এ খাত সম্পর্কে না বুঝে বলে। ৰুদ্র ঋণ শ্রমিক ও উদ্যোক্তা আয়ের সুযোগ করে দেয়। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, মাইক্রোফিন্যান্স ইনস্টিটিউটে কর্মরতরা বেশি বেতন পায় না। এর মানে এখানে মুনাফার অংশ বাইরে যায় না। ৰুদ্র ঋণের সঙ্গে অন্যান্য সার্ভিস সুবিধা প্রদান করলে গ্রাহকদের অসত্মিত্ব রৰার ৰেত্রে সুবিধা হয়। ড. মসিউর রহমান বলেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি সফল না হলে মাইক্রোফিন্যান্স ইনস্টিটিউট সফল হবে না। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বলেন, বিশ্বের মধ্যে ৰুদ্র ঋণের ব্যাপারে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ৰুদ্র ঋণের ৰেত্রে ৮০ শতাংশ রয়েছে এশিয়াতে। বাকি ১০ শতাংশ হচ্ছে আফ্রিকা ও ১০ শতাংশ হচ্ছে লাতিন আমেরিকায়। তিনি বলেন, তিনটি কারণে ৰুদ্র ঋণের ব্যাপারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করছে। প্রথমটি হচ্ছে ৰুদ্র ঋণের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দ্বিতীয় হচ্ছে পলস্নী উন্নয়ন সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সৃষ্টি করা ও তৃতীয় হচ্ছে মাইক্রোফিন্যান্স রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমআরএর মাধ্যমে আলাদা মনিটরিং করছে। ড. ইউনূস বলেন, ৰুদ্র ঋণে প্রযুক্তি হচ্ছে বড় একটি ইসু্য। প্রযুক্তির ব্যাপারে এমআরএ ধাপে ধাপে উৎসাহ করতে পারে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেমন মোবাইল ব্যাংকিং। তবে ৰুদ্র ঋণের বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিতীয় প্রজন্মকে দেখছেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয় প্রজন্মের ঋণ গ্রহীতা, ঋণের চাহিদার ধরন প্রথম প্রজন্ম থেকে ভিন্ন। দ্বিতীয় প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করা হবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, এমআরএকে শক্তিশালী করতে হবে। এশিয়ার এমন কিছু দেশ আছে মাইক্রোফিন্যান্সকে জনপ্রিয় করতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সেৰেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
সেমিনারে ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ফজলে হোসেন আবেদ বলেন, ৰুদ্র ঋণের ব্যাপারে বাংলাদেশের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি সরকারের প্রতি ৰুদ্র ঋণের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের দাবি জানান। বিশেষশায়িত ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হলে জাতীয়ভাবে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য বিবোচন, মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য মনিটরিং প্রতিষ্ঠান মাইক্রোফিন্যান্স রেগুলেটরি অথরিটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
তিন দিনের সেমিনারে বিভিন্ন বিষয়ে উঠে আসা দিক নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আনত্মর্জাতিক সেমিনারে তিনদিন ৰুদ্র ঋণের ব্যাপারে বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। এরমধ্যে পরিসংখ্যানভিত্তিক নয় মনিটরিং কাজ হতে হবে ডায়নামিক। এ খাতের সকল প্রয়োজনীয় পরিবর্তন চিহ্নিত করবে রেগুলেটরি অথরিটি। ৰুদ্র ঋণের স্বচ্ছতা, উচ্চ সুদের হারের ব্যাপারে গ্রাহকরা কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবে তা বের করতে হবে। ৰুদ্র ঋণ কোন চ্যারিটি নয়, স্বল্প খরচে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ছোট ছোট ৰুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানকে মনিটরিং করা, ডাটা সংগ্রহ করা, ক্রেডিট রেটিং হ্রাস করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.