যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে ১৫ হাজার ক্যাডার মাঠে by শংকর কুমার দে

সারাদেশের জামায়াত- শিবির ও আত্মগোপনে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের কাছে আছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ।
জামায়াত- শিবিরের প্রায় ১৫ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডারকে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে মাঠে নামানো হয়েছে। সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা শুরু করা হবে। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। জামায়াতÑশিবির আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের গাড়িসহ যানবাহনে আগুন, ভাংচুর, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে। এসব ঘটনায় জামায়াতের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডাররা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে সহিংস ও রক্তক্ষয়ী ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। পুলিশ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জামায়াতÑশিবির ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করবে।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রাম, বান্দরবন, সিলেট এলাকার দুর্গম পাহাড়ে ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড-বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে জামায়াতÑশিবিরের ক্যাডার ও জঙ্গীরা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গী ও ক্যাডার অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে আত্মগোপনে থাকা অবস্থা থেকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানোর সহিংস ঘটনায় অংশ নিচ্ছে। গত ছয় মাস ধরে জামায়াতÑশিবিরের ক্যাডারদের সঙ্গে জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহরীর ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একত্রে ট্রেনিং ক্যাম্পে যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীর বাইরের কোন কোন জেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জামায়াতÑশিবিরের ব্যানারে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে মাঠে নেমে রাজপথে সরকারবিরোধী শক্তি প্রদর্শন করছে।
বাংলাদেশ থেকে যেসব জঙ্গী আফগানিস্তানের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে তাদের অর্থসহ সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানোর সহিংস ঘটনায় জড়িত করছে জামায়াতÑশিবির। আফগানফেরত জঙ্গীরাই জঙ্গী সংগঠন গড়ে তোলার সময়ে জামায়াতের সহযোগিতা নেয়। জামায়াত জঙ্গীদের সহযোগিতা করার জন্য তালিম বিভাগ চালু করে। তালিম বিভাগের তত্ত্বাবধানে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো। তালিম বিভাগের প্রশিক্ষণের কর্মকা- ফাঁস হয়ে গেলে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় স্বাস্থ্য বিভাগ। জামায়াতের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনেই জঙ্গীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পিস্তল, রিভলবার, গ্রেনেড, বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্যের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তাদের।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলোকে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে জিহাদী বই, অডিও, ভিডিও ক্যাসেট সরবরাহ করছে। এছাড়া তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করতে জনমত সৃষ্টির জন্য সভা, সমাবেশ, সিডি, লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গত সোমবার খোদ রাজধানীতে জামায়াতÑশিবিরের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে লিফলেট বিলি করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে এই ধরনের লিফলেট বিলিবন্টনের ঘটনা সুপরিকল্পিতভাবে উস্কানিমূলক বলে মনে করা হচ্ছে।
পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই জামায়াতÑশিবিরের নেতা-কর্মী-ক্যাডার ও নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাদের কাছে মজুদ আছে অস্ত্র গোলাবারুদ। তাদের কাছে থাকা বেশির ভাগই ক্ষুদ্র অস্ত্র। রয়েছে গ্রেনেড ও শক্তিশালী বোমা ও বোমা বানানোর রসদ। দলের জরুরী প্রয়োজনে এসব অস্ত্র নিরাপত্তার জন্য মজুদ রাখা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানোর সহিংস ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন, ভাংচুর, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এজন্য ইতোমধ্যেই রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাড়তি সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই জামায়াতÑশিবির ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ও তাদের মজুদ করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.