চট্টগ্রাম পুলিশে জামায়াতী ভূত, অভিযানের আগেই তথ্য ফাঁস

 চট্টগ্রামে দীর্ঘ ৪ বছরেও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি পুলিশ। সিএমপি কমিশনার মাইনুর রহমানের আমলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হামলা-ভাংচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাভিত্তিক তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা ছিল।
তালিকা প্রস্তুত করা নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরোধীর কারণে এটি হয়নি। জামায়াত-শিবির গ্রেফতারের দিক থেকেও পিছিয়ে সিএমপি। সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করলেও ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে।
অভিযোগ রযেছে, সিএমপি কমিশনার থেকে ডিসি পর্যায়ে গত চার বছরে যে পরিবর্তন হয়েছে এদের শতকরা ৯০ ভাগই জামায়াত-বিএনপির আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তা। ফলে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিবির মুক্ত হতে পারেনি। পুলিশের ছাড়ের কারণে এখনও শিবিরের দখলে ছাত্রাবাসগুলো। এমনকি খুলশী, বায়েজিদ ও কোতোয়ালি থানাধীন মসজিদগুলোতেও বিএনপি-জামায়াতের অনুসারীরাই কমিটিতে রয়েছে। তাবলিগের নামেই এই তিন থানার মসজিদগুলোতে পাঞ্জেকানা নামাজের পর আন্তঃবৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে দীর্ঘ ৫/৬ বছর ধরে চট্টগ্রামে অবস্থান করায় তাদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের আঁতাতের বিষয়াটিও এখন সবার জানা।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় যাবার পর নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন ব্যাপারীপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ শিবিরের ৬ ক্যাডারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সাবেক সহকারী কমিশনার তানভীর আরাফাতের তত্ত্বাবধানে থাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দুর্বল রিপোর্টের কারণেই অস্ত্রসহ ধরা পড়া শিবির ক্যাডাররা জামিনে বেরিয়ে আসে এবং ফের গোপন আস্তানা গড়ে তোলে। সেই সময়ে শিবিরের ঐসব আস্তানা থেকে জামায়াত-শিবিরের ব্রেনওয়াশ নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নানা বই ও অডিও ক্যাসেট উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে কম্পিউটারের কয়েকটি হার্ডডিস্কও জব্দ করা হয়। কিন্তু এসব হার্ডডিস্কে কি তথ্য রয়েছে এমন প্রশ্নে সহকারী কমিশনার বলেছিলেন এসব হার্ডডিস্ক পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ নানা অজুহাতে শিবিরের তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছে।
এদিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে জামায়াত-বিএনপি ঘেঁষা কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে অবস্থান করায় এরা এই দীর্ঘ সময়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কাজ করছে। ২০১০ সালের শেষের দিকে নগরীর আলমাস সিনেমা হলের পাশে থাকা একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে চট্টগ্রাম মহানগর-জেলা-উপজেলা পর্যায়ের জামায়াতের কয়েক শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে জেদান আল মূসার নেতৃত্বে গ্রেফতার করা হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যেই জামায়াত-শিবিরের নেতারা জেল থেকে বেরিয়ে আসে। চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করছে জামায়াত-শিবির। তাই সরকারের নজর কাড়তে জামায়াত-শিবির পাকড়াও অপারেশন অব্যাহতের বিষয়টি পুলিশ জাহির করার চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হচ্ছে উর্ধতন কর্মকর্তাদের জামায়াতী কানেকশন ও অভিযানের তথ্য ফাঁস হওয়ার কারণেই।

No comments

Powered by Blogger.