দুর্নীতির মূলভিত্তি by রাজিব ভট্টাচার্য

গণতন্ত্রকে সক্রিয়ভাবে জীবিত রাখতে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক। প্রকৃত রাজনীতির প্রভাবে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয় এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায় করতে পারে।
রাজনৈতিক জাগরণের ফলে গণতন্ত্রের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়। মানুষ গণতান্ত্রিক মনোভাবের মাধ্যমে তাদের দলের ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের পরিচালক হিসেবে নির্ণয় করে। তাই রাজনৈতিক সোচ্চারতা গণতন্ত্রকে সজীব রাখে। সার্বভৌম মতার পরিচালক হলো সরকার। সরকার যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে তখন সরকার হওয়া উচিত নিরপে চিনত্মার অধিকারী এবং সর্বজনীন। কিন্তু রাজনীতিতে দলীয় প্রভাবে তা ভিন্ন হয়ে ওঠে। প্রতিটি দেশের শাসন ব্যবস্থা একটি নিরপে এবং কোন রাজনৈতিক নেতার হসত্মেেপর অযোগ্য ব্যাপার। এই শাসন ব্যবস্থার ওপর মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নির্ভর করে। দেশের প্রশাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, সম্পত্তি রার নিরাপত্তা, নাগরিক হিসেবে গ্রহণযোগ্য রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা। দেশে বিরাজমান যে কোন েেত্র কোন নাগরিক যখন অধিকারবঞ্চিত হয়ে দুনর্ীতিবাজ ব্যক্তির শাসত্মির দাবিতে প্রশাসনের কাছে ছুটে যায় তখন সেই প্রশাসন যদি মতাসীন দলের প্রভাবে দোষী ব্যক্তিকে শাসত্মি দিতে না পারে তাহলে তিগ্রসত্ম ব্যক্তির কি করার থাকে?
এর কারণ কি? এর কারণ হলো সে দোষী ব্যক্তিটি যে দল মতায় আছে সে দলের লোক। আর আমাদের রাজনীতিতে এমন অনেক মতাশীল নেতা আছে যারা স্বজনপ্রীতির জন্য প্রকৃত সত্যকে মিথ্যে বলে প্রমাণ করে ছাড়ে। সুনাগরিকের তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন হয়; বুদ্ধিমত্তা, আত্মসংযম, বিবেকবোধ। স্বজনপ্রীতির কারণে আমাদের দেশের অনেক নেতার 'বিবেকবোধ' জ্ঞানটা লুপ্ত হয়ে যায়।
আমাদের দেশে বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে যারা রাজনৈতিক নেতা হয়ে বসে তাদের রাজনীতি সম্পর্কে তেমন জ্ঞান থাকতে হয় না। এলাকায় শিতি লোক যদি নেতা হতে না-ও পারে, তবে যদি কোন লোক দু'-চারটা খুন করতে পারে, ভাল দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতে পারে, লাঠিয়াল বাহিনী পুষতে পারে তাহলে সে বড় এক নেতা হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সেই কুখ্যাত ব্যক্তিটি রাজনৈতিক দলের মধ্য দিয়ে নিজেকে দেশের জন্য মুখোশধারী এক মহানায়ক তৈরি করে বসে। এক সময় তার কথায় চলতে থাকে পুলিশ প্রশাসন।
শিা প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির প্রভাবের দিকে প্রতিটি সরকারের আমলে শিক-শিকিা নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু সেই নিয়োগেও ঢোকানো হয় রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিকে। ফলে যোগ্য ব্যক্তি হয় অধিকারবঞ্চিত এবং রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়োগকৃত ব্যক্তিরা তাদের রাজনৈতিক ক্রিয়া-কলাপ শিা প্রতিষ্ঠানেও চালাতে থাকে। তাছাড়া শিা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিতে যখন দলীয় প্রভাব কাজ করে তখন সরকারদলীয় ছাত্রছাত্রীরা, শিকরা ছোটখাটো বিষয়কে পুঁজি করে বড় নেতা ও পরিচিত ব্যক্তি হবার আশায় মিটিং-মিছিল শুরম্ন করে দেয়। তন্মধ্যে পুলিশও সরকারদলীয় সদস্যদের প নিয়ে ভূমিকা রাখতে বাধ্য হয়। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতে, পুলিশের পাশ থেকে অপর পরে ওপর গুলিবর্ষণও করতে দেখা যায়। তখন শিা প্রতিষ্ঠানে দেখা দেয় নৈরাজ্য। সেই নৈরাজ্য শিা অর্জনের েেত্র অনত্মরায় হয়ে দাঁড়ায়। অপরদিকে রাজনীতিতে দলীয় প্রভাবে ছাত্রছাত্রীরা যে বই পড়ে শিতি হবে সেই বইতে ঢোকানো হচ্ছে দলীয় ইতিহাস। ফলে প্রকৃত শিা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নবপ্রজন্ম। প্রতিটি দল যদি স্বজনপ্রীতি বাদ দিয়ে তাদের দল থেকে প্রকৃত দোষীকে ত্যাগ করত তাহলে সেই দোষী ব্যক্তিরা তাদের ন্যায্য শাসত্মি পেত।
শুধু তাই নয়, রাজনীতিতে দলীয় প্রভাবে এমন আরও অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে যা প্রকাশ করার, উপযুক্তভাবে তুলে ধরার সামর্থ্য এবং সাহস আমার কাছে অনুপস্থিত। শুধু যুবসমাজের, ছাত্রসমাজের প্রত্যাশা একটাই; অন্যায়কারী সে যেই হোক তার প্রতি স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে, মতার অপব্যবহার করে তাকে যেন প্রকৃত শাসত্মি থেকে তুলে আনা না হয়। সেই সাথে আমাদের রাজনীতি হয়ে উঠুক মতার লোভহীন, সৎ, মতার অপব্যবহারমুক্ত এবং কল্যাণমুখী।
শ্রেণী-একাদশ, বিএএফ শাহীন কলেজ, চট্টগ্রাম

No comments

Powered by Blogger.