অভিমানী পরী by মিলু শামস

অভিমানী পরী নভেরা আহমেদ এখন কেমন আছেন? এ প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই। কেমন ছিলেন তিনি? আমাদের অনুরোধে স্মৃতির পাতা ওল্টান শিল্পী হাশেম খান_'যদ্দুর মনে পড়ে, নভেরা আহমেদকে আমি প্রথম দেখি ১৯৫৬ সালে ঢাকায়।
আমি তখন প্রথমবর্ষের ছাত্র। শহীদ মিনার তখন দাঁড়িয়ে গেছে। শিল্পী হামিদুর রহমানও তখন ঢাকায়। আমরা দল বেঁধে দেখতে যেতাম। আগেই শুনেছিলাম নভেরা আহমেদ শহীদ মিনারের ওপরের চত্বরে কিছু ভাস্কর্য করেছেন। দুয়েকটা কাগজে সে নকশার খবরও বেরিয়েছিল।
শহীদ মিনারের কাজ শেষে হামিদুর রহমান এবং নভেরা আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির নিচ তলায় দুটো মু্যরাল করছিলেন। সেখানে এ দু'জন এক সঙ্গে কাজ করতে দেখেছি। নভেরা আহমেদ মাঝে মধ্যে আমাদের ক্যাম্পাসে যেতেন। অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন। পোশাক আশাকে এত আধুনিক ছিলেন যা সে সময়ের ঢাকা শহরে দেখা যেত না। কালো রঙের শাড়ি পরতেন, গলায় থাকত নানা রকম রঙিন মালা।
শহীদ মিনারের নিচে পূর্ব-দণি দিক ঘিরে একটি গ্যালারি ছিল। কথা ছিল ওখানে একটি লাইব্রেরিও হবে। দেয়ালে থাকাবে শহীদদের প্রতি নিবেদিত এবং বাংলাভাষাবিষয়ক কিছু মুর্যাল। হামিদুর রহমান বেশ কিছু মুর্যাল করেও ফেলেছিলেন। তখনি শুনেছিলাম মূল নকশা অনুযায়ী যেমন শহীদ মিনার শেষ করতে পারেননি তেমনি মু্যরালগুলোও শেষ করতে পারেননি। '৭১ সাল পর্যনত্ম যে শহীদ মিনারটি আমরা পেয়েছিলাম তা অসম্পূর্ণ ছিল। দেয়াল চিত্রগুলো ১৮৫৬-এর পরে আর এগোয়নি, সে সঙ্গে বলা যায় নভেরা আহমেদের যে ক'টি মু্যরাল শহীদ মিনার চত্বরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি হচ্ছিল, তা আর আলোর মুখ দেখতে পারেনি। এরপর '৭১-এর ঘটনা সবার জানা, হানাদার বাহিনী ২৬ মার্চ রাতেই শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়। যাই হোক, যত দূর মনে পড়ে, '৫৬, '৫৭, '৫৮-এ সময়ে নভেরা ঢাকাতে ছিলেন। এরপর মাঝে মধ্যে আসতেন, ঢাকাতে তিনি একটি ভাস্কর্য প্রদর্শনী করেছিলেন '৫৭ কি '৫৮ সালে। এ ভাস্কর্যগুলো দেখে সে সময় আমরা আমাদের সীমিত জ্ঞানে বিস্মিত হয়েছিলাম। যদিও সে সময় ভাস্কর্য শিল্প, শিল্পের মনোত্তীর্ণতা নিয়ে খুব একটা জানতাম না। নভেরার এ ভাস্কর্য নিয়ে সে সময় ঢাকার শিল্পবোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল, অনেক শিল্পবোদ্ধা এগুলোকে অত্যনত্ম উঁচু মানের ভাস্কর্য বলে অভিমত দিয়েছিলেন এবং তার মেধার প্রশংসা করেছিলেন। আবার কেউ কেউ সেগুলোকে পাকিসত্মানের সে সময়ের প্রোপটে বিরূপ সমালোচনা করেছিলেন। সে সময়ই কিংবা তার পর পরই নভেরা আহমেদ বার্মা (মিয়ানমার) রেঙ্গুনে একটি প্রদর্শনী করেছিলেন এবং তা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছিল বলে শুনেছি। পরবর্তীতে শিল্পকলা চর্চা ও শিল্পকলার জগতে আমি কিছুটা অর্জন করি। তখন নভেরা আহমেদও তার শিল্পকলা নিয়ে বেশ আগ্রহান্বিত হই এবং উপলব্ধি হয় নভেরা আহমেদ একজন শিল্পী হিসেবে সময়ের অনেক আগেই (সময়র চেয়ে এ্যাডভান্স) এদেশে জন্মেছিলেন। বিশ্বের উন্নত দেশে যে আধুনিক ধারার ভাস্কর্য হচ্ছিল নভেরা আহমেদ সেই ধারাটি তখন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। আধুনিক ভাস্কর্যের শক্তিশালী আঙ্গিকে তিনি তার ভাস্কর্য নির্মাণে ব্রত হন। সরলীকারণ, ফরমবস্তু বা ফিগারের আকার আয়তন এবং শূন্যতাকে (স্পেস) নিয়ে শিল্প রচনার গুরম্নত্ব তিনি বুঝে ছিলেন। স্পেসকে গুরম্নত্ব দিয়ে তিনি তার ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ করেছিলেন। অথচ সে সময় ভাস্কর্যের পীঠস্থান আমাদের কাছের দেশ ভারতে ও কদাচিৎ এ ধরনের কাজ দেখা গেছে। পাকিসত্মান নামক ইসলামী দেশে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে ভাস্কর্য নির্মাণে অনেক বিধি-নিষেধ ছিল। এসব নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার বুদ্ধিমত্তা থেকেও যদি তিনি কাজ করে থাকেন। তাহলেও তার মেধা ও সাহসের পরিচয় মেলে। স্বাধীনতার আগেই তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, পাবলিক লাইব্রেরি ও চারম্নকলা চত্বরে তিনি যে ভাস্কর্য করেছিলেন সেগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। রাষ্ট্র, সমাজ এমনকি শিল্পীরাও তার ভাস্কর্যকে অবহেলা করেছেন। ফলে তার এ অপূর্ব ভাস্কর্যগুলো সমূলে বিনষ্ট হয়েছে কিছু কিছু ভাস্কর্যের অংশ বিশেষ নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে পীড়াদায়ক মনে হলেও সত্যি সত্যি তার ভাস্কর্যগুলো সংরণের ব্যবস্থা করতে পরিনি, অবশেষে আমিও লেখক মুনতাসির মামুন উদ্যোগ নিয়ে সংস্কৃতিসেবীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করি। দীর্ঘদিন পর নভেরা আহমেদের ভাস্বর্য, শহীদ মিনারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ইত্যাদি আবার গুরম্নত্ব পেতে থাকে। গত আওয়ামী সরকারের আমলে শিল্পকলা একাডেমী ও জাদুঘর সচেতন হয়ে ওঠে। সুসাহিত্যিক মুসত্মাফা নূর উল ইসলাম (তখন জাদুঘরের চেয়ারম্যান), শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক কামাল লোহানী, মুনতাসির মামুন ও আমার উদ্যোগে পাবলিক লাইব্রেরির একটি সামনে নভেরা আহমেদের ভাস্কর্যগুলো সংরণ করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। জাদুঘর কর্তৃপ তখন নভেরা আহমেদের একটি প্রদর্শনীও করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সম্মানিত করতে একুশে পদক দিয়েছিলেন। তিনি প্যারিসে বিশেষ দূতও পাঠিয়েছিলেন নভেরাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে, কিন্তু তিনি আসেননি।'
বিস্ময়কর প্রতিভার এই নারীকে নিয়ে সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই 'নভেরা' নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত সে উপন্যাসে এক জায়গায় শিল্পী মুর্তজা বশীরের জবানিতে বলা হয়েছে, 'তাকে আমি প্রথম দেখি ঢাকায় ১৯৫৮ সালে। তখন আমিনুল ফোরেন্স থেকে এসেছে। একদিন বলল, আরে হামিদ এসেছে, সঙ্গে নভেরা নামের একটি মেয়ে। দু'জনে শহীদ মিনারে কাজ করছে। বলে আনিুল হেসেছিল। শুনে আমার কৌতূহল হলো। সেই সময়ে একটা বাঙালী মেয়ে প্রায় সম্পর্কহীন একজন পুরম্নষের সঙ্গে এই ভাবে থাকতে পারে ভাবতে অবাক লেগেছে বললে কম বলা হবে। প্রায় অবিশ্বাস্য, তাকে দেখতে পুরনো ঢাকায় হামিদদের বাড়ি আশেক লেনে গিয়েছিলাম আমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে। দেখলাম নভেরা খুব সুন্দরী। বড় বড় চোখ, কাজল দেওয়া, শরীর আকর্ষণীয়, একটু গোলগাল। কালো শাড়ি পরে আছে। সব মিলিয়ে সুন্দরী। কিন্তু আমার কাছে তাকে মনে হয়েছে প্রাণহীন। যেন একটা সুন্দর মৃতদেহ। যে ক'বার দেখেছি তাকে হাসতে দেখিনি, সব সময় বিষণ্ন থাকত।... লাহোরের মল রোডে চ্যারিং ক্রসের কাছে ছিল আর্টস কাউন্সিল অফিস, অন্য নাম ছিল আল হামরা। ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে একদিন সেখানে গিয়ে নভেরাকে দেখতে পেলাম, আমাকে দেখে নভেরা বলল, চিনতে পারেন? ভদ্রতা রায় জন্যই যেন বলা, কোন উষ্ণতা ছিল না তার কথায়। দেখলাম সেই কালো শাড়ি, গলায় রম্নদ্রারে মালা। হাই হিল জুতো।...... বাংলাদেশ হবার আগেই আমি প্যারিসে চলে আসি সপরিবারে। মু্যরালের ওপর একটা কোর্স নিলাম। দেশ স্বাধীন হলো। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এ্যাম্বাসিতে একটা রিসেপশনে গিয়ে হঠাৎ নভেরার সঙ্গে দেখা। বলল, কেমন আছেন? দেখলাম, কালো শাড়ি অপরিবর্তিত আছে। পিঠময় চুল ছড়ানো, একটু মোটা হয়েছে। হাতে লাঠি, দু'হাত থরথর করে কাঁপছে। হয়ত পার্কিনসন ডিজিজ। তাকে বেশ কানত্ম আর কিছুটা হতাশাগ্রসত্ম মনে হচ্ছিল। আমি বললাম, ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? কি কাজ করছেন? নভেরা বলল, দিন চলে যাচ্ছে। কাজ? হ্যাঁ খুব বড় বড় কাজ করছি এখন। আমি বললাম, এক্সজিবিশন করবেন না? নভেরা চিনত্মিত মুখে বলল, কি করে করব? কাজগুলো এত বড় যে বার করতে হলে স্টুডিওর দরজা-জানালা ভেঙ্গে বের করতে হবে। ..... নভেরা একটা রহস্য।' এ বইয়ের অন্য জায়গায়__ '১৯৫৩-এর আগস্ট। আমিনুল স্কলারশিপে এসেছে পড়তে, দু'বছর থাকবে ফোরেন্সে। এর কয়েকদিন পরই হামিদের চিঠি এল। হামিদ লিখেছে, সে আর নভেরা আসবে। চিঠি পড়ে একটু বোকা বনে গেল আমিনুল। নভেরা কে? নাম শুনে ইতালিয়ান মনে হচ্ছে। ....... হামিদ কি নভেরা নামের মেয়েটিকে বিয়ে করেছে? কই লেখোনি তো কখনও। চিঠির উত্তর দিল আমিনুল। কয়েকদিন পর হামিদের চিঠি এল। দু' এক কথার পর লিখেছে, নভেরা একটি বাঙালী মেয়ে, লন্ডনে ক্যাম্বারওয়েল আর্ট স্কুলে ভাস্কর্য শিখছে। বাকিটা তুমি সামনাসামনি দেখলেই বুঝবে।
এতে রহস্য আরও ঘনীভূত হলো, বাঙালী মেয়ে, তার আত্মীয়া নয়, অথচ দু'জনে এক সঙ্গে আসছে ফেরোুেন্স। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ একদিন হামিদ এসে হাজির। সঙ্গে নভেরা। সুন্দর ফসর্া চেহারা, মাঝারি দৈর্ঘ্য, মুখে হেভি মেকাপ। দারম্নণ স্মার্ট মেয়ে। চোখের নিচে কাজল, ওপরের ভ্রূ সরম্ন করে অাঁকা। গলায় রম্নদ্রারে মালা। কালো শাড়ি, কালো বস্নাউজ, তার ওপর বাদামি রঙের কার্ডিগান। মুখে বেশ সপ্রতিভ ভাব, চঞ্চলা নয় আবার রাশভারীও নয়। এই দুয়ের মাঝ খানে ফেলা যায় এমন একটি ব্যক্তিত্ব। সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়। প্রথম দৃষ্টিতেই ভাল লাগার মতো।
সেই পঞ্চাশের দশকে যখন এদেশে শিল্পকলার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা হাঁটি হাঁটি পা পা করছে সে সময় একজন নারীর ভাস্কর হিসেবে বিকশিত হওয়া সহজ বিষয় নয়। তাঁর ভাস্কর্য দেখলে, তাঁর জীবন সম্পর্কে কৌতূহল জাগবেই।
তাঁর সময়ের শিল্পীদের চোখে নভেরার বাইরের রূপ এমনই ছিল। অনত্মরে তিনি ছিলেন প্রখর ব্যক্তিত্বের অধিকারী, আত্মবিশ্বাসী এবং একরোখা ধরনের। তাকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনতেন যারা তারা প্রায় কেউই এখন বেঁচে নেই। তার বাবা ছিলেন এক্সাইজ অফিসার। পূর্ব পাকিসত্মানের কুমিলস্নায় বদলি হন ১৯৪৭ সালে। নভেরার বিয়ে হয় ১৪ বছর বয়সে তাঁর অনিচ্ছায়। মূলত তাঁর বাবার পীড়াপীড়িতে বিয়ে হয়েছিল। ছ'সাত মাস পর বিয়েটা ভেঙ্গে যায়। বিয়ে হয়েছিল সম্ভবত ১৯৪৫ সালে কলকাতায়। ভাস্কর্য বিষয়ে পড়াশোনা করতে তিনি লন্ডন যান ১৯৫১ সালে। সেখানেই শিল্পী জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয়।
ভাস্কর্যের ওপর তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিার শুরম্নও সেখানে। লন্ডনের ক্যাম্বারওয়েল আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে। সেখানেই শিল্পী হামিদুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব। হামিদুর রহমান বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাঁকে। দু'জনের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়ার জন্য তাদের যৌথ কাজগুলোও অপূর্ব হয়ে ওঠে।
হামিদুর রহমান ও নভেরা শহীদ মিনারের কাজ শুরম্ন করেন ১৯৬৭ সালে। শহীদ মিনারের জন্য অনেক মডেল জমা পড়লেও হামিদ-নভেরার ডিজাইনটিই নির্বাচিত হয়। প্রায় একমাস খেটে দু'জনে ডিজাইনটি তৈরি করেছিলেন। '৫৭-এর একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন করা হয়। কাজ চলে '৫৮ সাল পর্যনত্ম। কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই মার্শাল ল জারি হওয়ায় শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছিলেন নভেরা। এরপর '৫৮ সালের শেষ দিকে তিনি এয়ারপোর্ট রোডে এম আর খান নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে (এখন যেখানে পারটেক্স গ্যালারি) একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৫৯ সালে পাকিসত্মান ইউনাইটেড এসোসিয়েশনের অর্থ সহায়তায় একটি একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী করেছিলেন নভেরা আহমেদ।
১৯৫৯ কিংবা ষাটে নভেরা লাহোর চলে যান। একষট্টি সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত 'ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব পেইন্টিং স্কাল্পচার এন্ড গ্রাফিক আর্টস নামে এটি প্রদর্শনীতে তার ছ'টি ভাস্কর্য স্থান পেয়েছিল। প্রদর্শনীতে 'চাইল্ড ফিলোসফার' নামে তাঁর একটি ভাস্কর্য 'বেস্ট স্কাল্পচার' পুরস্কার পায়। নভেরার সে পুরস্কার শুধু নারী ভাস্কর্যর হিসেবে নয় শিল্পকর্ম হিসেবে ভাস্কর্যর প্রথম স্বীকৃতি ছিল। এর আগে পশ্চিম পাকিসত্মানে ভাস্কর্য করার ওপর এক ধরনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। লাহোরে কয়েক বছর থাকার পর নভেরা চলে যান বোম্বেতে। সেখানে ইসমত চুগতাইর বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। বোম্বে থেকে প্যারিসে তারপর আবার গিয়েছিলেন লাহোরে। বেশি দিন থাকেননি। বিভিন্ন দেশ ঘুরে শেষে প্যারিসেই স্থায়ী হন। সম্ভবত ১৯৮৮তে সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পা হারান সে সময় খুব অর্থকষ্টেও নাকি ছিলেন।
তাকে শেষ দেখেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সফরে ফ্রান্সে গিয়ে। সে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওনাকে শুধু দেখেছি, কথা হয়নি। বয়স হয়েছে। ভাস্কর্য করাও ছেড়ে দিয়েছেন। নভেরা আহমেদ সম্পর্কে কল্পনায় অনেক কিছু ছিল কিন্তু তখন তিনি একজন সাদা-মাটা বয়স্ক নারী।'
এখন তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন কেউ জানে না। লোকচুর আড়ালেই রয়েছেন। হয়ত একদিন পৃথিবী থেকেও হারিয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁর ভাস্কর্যগুলো চিরকাল বলে যাবে, সময়ের চেয়ে অগ্রগামী এক নারী জন্মেছিলেন, তাঁর নাম নভেরা। তিনি ছিলেন আছেন... থাকবেন... শিল্পীর মৃতু্য নেই।

No comments

Powered by Blogger.