আন্না ভ্যালেন্টাইন

মানুষ ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নহীন মানুষ কখনও বাঁচতে পারে না। ছোটবেলায় চারদিকের সব কিছুই বৈচিত্র্যময় মনে হয়। যে কারণে মানুষ বৈচিত্র্যের টানে একেক রকম স্বপ্ন বুনে মনের আকাশে।
বাচ্চারা প্রায়ই আনন্দের বহিপর্্রকাশে বলে থাকে, আমি এটা হব, আমি সেটা হব। এ সবই তাদের কল্পনামাত্র। বাসত্মবে হয়ত তার অনেকখানিই অপূর্ণ থেকে যায়। আবার অনেকের স্বপ্ন সত্যি হয়ে ধরা দেয়। আবার এমনও অনেকে আছেন যারা স্বপ্ন দেখেননি অথচ স্বপ্নের মতোই ধরা দিয়েছে সবকিছু। তেমনি একজন আন্না ভ্যালেন্টাইন। ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে একটি অতি সুপরিচিত নাম। ডিফারেন্ট ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে। ছোটবেলায় কখনও তিনি কল্পনাও করেননি ফ্যাশন ডিজাইনিংকে পেশা হিসেবে নেবেন। তথাপি এক রকম ভাল লাগা থেকে এ পেশায় নিয়োজিত হন। ফ্যাশনে যোগ করেন নতুন মাত্রা। নিতানত্মই শখেরবশে ভর্তি হয়েছিলেন হ্যামারস্মিথ কলেজের কাটিং এবং প্যাটার্ন কোর্সে। কারণ ছোটবেলা থেকে টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করতেন আন্না। এই কোর্স করতে গিয়ে পরিচয় হয় আরেক বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার এন্টোনিয়া রবিনসনের সঙ্গে। এ সময় তারা দুজন বেশ ভাল বন্ধু হন। এই কোর্স শেষে তারা চিনত্মা করেন একসঙ্গে কিছু একটা করার। সেই চিনত্মার বাসত্মব রূপায়ণে তারা প্রতিষ্ঠা করেন একটা কর্নার শপ। এ সময় তারা পার্টি ড্রেস মেকিংয়ে বেশ দতা ও সুনাম অর্জন করেন। আশির দশকের শেষ দিকে তারা পার্টি ড্রেসের প্যাটার্ন বদলে ফেলেন। ১৯৯৩ সালে তাদের এক কায়েন্ট সেরেনা স্ট্যানফোন পরামর্শ দেন বিয়ের ড্রেসের ডিজাইনে নতুনত্ব আনার। সে অনুযায়ী তারা বিয়ের পোশাকের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বিয়ের সু্যট গাউনে নানা বৈচিত্র্যের ছোঁয়া আনেন। ২০০১ সালের দিকে পরিচয় ঘটে ক্যামেলিয়া পার্কার বউলসের সঙ্গে। ক্যামেলিয়া আন্নাকে কোমল চাহনির জন্য খুব পছন্দ করতেন। এই চাহনির জন্য বেশ খ্যাতি অর্জন করেন আন্না। ২০০৫ সালের দিকে তাদের অগ্রযাত্রার পথ আরও সুগম হয় যখন তারা প্রিন্স চার্লসের সুট ডিজাইন করার অনুমতি পান। সেই ডিজাইনের ব্যাপক প্রশংসার পর রবিনসন ভ্যালেন্টাইনের নাম সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। জুটিবদ্ধ হয়ে তারা অনেক সফল কাজের ইতিহাস রচনা করেছেন। লন্ডন প্যারিস মিলানে অধিকাংশ ফ্যাশন শোতেই আলাদা মর্যাদা পায় রবিনসন ভ্যালেন্টাইনসের পোশাকগুলো। গত ১১ ফেব্রম্নয়ারি রাতে আন্না ভ্যালেন্টাইন লন্ডনের ম্যাজাইস ক্যান্সার কেয়ারিং সেন্টারে এক চ্যারিটি শোর আয়োজন করে। জমকালো এই অনুষ্ঠানে ডাচেস অব কর্নওয়েল, ফাজাই-এর প্রেসিডেন্ট এবং বিখ্যাত অভিনেতা রম্নপার্ট এভরেট ছাড়াও বিখ্যাত সব ডিজাইনার দ্বারা পুরো হল রম্নম ঠাসা ছিল। এই শোতে ক্যামেলির পছন্দের বিখ্যাত সেই উইডিং গাউনের প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আন্না বলেন, পোশাকের স্বকীয়তা সব সময় আমাকে আকর্ষণ করে। কাপড় ভেদে আমি পোশাকে আর্কিটেকচারাল ও স্ট্রাকচারাল প্যাটার্ন চেঞ্জ করে আনন্দ পাই। এছাড়াও ডাচেসের গুড সেন্সর অব হিউমারের ব্যাপক প্রশংসা করেন। স্প্রিং এবং সামারের পোশাক প্রদর্শনী করা হয় এই শোতে। সিফন কাপড়ের গাউন এবং এর সঙ্গে ম্যাচ করা ব্যাগ, ডিয়াফানাস গাউন, ক্রপড জ্যাকেট ইত্যাদির প্রদর্শনী হয়। ক্যাটওয়াকে অংশগ্রহণ করার জন্য কল করা হয় বিশ্বের নামী-দামী মডেল তারকাদের। সব কিছু মিলিয়ে আন্না ভ্যালেন্টাইন এক সফল ফ্যাশন শোর খ্যাতি অর্জন করেন। তার জীবনের চলার পথই নাকি তাকে ফ্যাশন সচেতনতায় উদ্বুদ্ধ করে। তিনি হুট করে কোন ডিজাইন প্রস্তুত করেন না। নিত্য নতুন ডিজাইনের েেত্র বহুবার চিনত্মা-ভাবনা করে পরীামূলক অপারেশন চালিয়ে তবেই তা বহির্প্রকাশ করেন। এ কারণে তার নিখুঁত কাজের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া।
নাইম হাসান

No comments

Powered by Blogger.