বিশ্ব অর্থনীতি- ফাটকাবাজি রোধে আর্থিক লেনদেনের ওপর কর বসাতে যাচ্ছে ইউরোপ

ইউরোপের ১১টি দেশ আর্থিক লেনদেনের ওপর কর আরোপের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এর ফলে প্রথমবারের মতো আঞ্চলিকভাবে আর্থিক লেনদেন কর প্রবর্তিত হতে যাচ্ছে।
যদিও ইউরোপ ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ বা ইউরো অঞ্চলভুক্ত ১৭টি দেশ এই কর আরোপের বিষয়ে কোনো মতৈক্যে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু জার্মানি, ফ্রান্সসহ ১১টি দেশ এই কর আরোপ করবে। অন্য দেশগুলো হলো: অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, এস্তোনিয়া, গ্রিস, ইতালি, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া ও স্পেন।
এর ফলে এসব দেশে শেয়ারসহ আর্থিক বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দশমিক ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। তবে ডেরিভিটিভসের জন্য এই হার হবে দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ার ফলে আর্থিক বাজারে ব্যাপক মাত্রায় ফাটকা কারবারের বিষয়টি নতুনভাবে আলোচনায় উঠে আসে। আর্থিক বাজারে ফাটকাবাজি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আর্থিক লেনদেনের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হয় মূলত ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে। তবে অনেক দেশই তা সমর্থন করেনি।
উল্লেখ্য, ৪০ বছর আগে অর্থনীতিবিদ জেমস টোবিন এই করের ধারণার প্রবর্তন করেন। সে কারণে এটি ‘টোবিন ট্যাক্স’ নামে পরিচিতি পায়।
আর্থিক বাজারের লেনদেনের ওপর এই করকে কেউ কেউ ‘রবিনহুড কর’ বলেও অভিহিত করেন। তাঁদের দাবি, আর্থিক বাজারে ফাটকাবাজি করে মানুষের কাছ থেকে প্রকারান্তরে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করে নেয়। কাজেই তাদের ওপর কর আরোপ করা উচিত।
আর্থিকবাজারে মাত্রাতিরিক্ত ফাটকাবাজির মাধ্যমে কারবারীরা একটা পর্যায়ে বড় ধরণের ঝুঁকিতে পড়েন। বিনিয়োগকারীদের বিরাট লোকসানের মুখে পড়তে হয়। কেননা, কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন আর্থিক পণ্যের (শেয়ার, বন্ড, ডেরিভিটিভস ইত্যাদি) দাম বাড়িয়ে সেটা থেকে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টা থাকে। আবার একাধিক আর্থিক পণ্যকে সমন্বিত করে নতুন পণ্য বানিয়ে বাজারে ছাড়া হয় নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য।
আর্থিকবাজারের ফাটকাবাজির পরিধি এখন এতোটাই বিস্তৃত যে খাদ্যপণ্যের বাজারেও তা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে খাদ্যের বিপুল মূল্যবৃদ্ধির পেছনে এই ফাটকাবাজি ভূমিকা রেখেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি ও এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.