আতঙ্ক ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলে মাঠে চার শতাধিক কিলার!- জঙ্গী থেকে সর্বহারা সবাই এককাট্টা ॥ গোয়েন্দা রিপোর্ট

 ঘটনাস্থল ঢাকা মেডিক্যালের কলেজ হাসপাতাল জরম্নরী বিভাগের প্রধান ফটক। পাশেই প্রতিদিনের মতো দাঁড়িয়ে পুলিশভ্যান। কিছুৰণ বাদে বাদেই র্যাবের একটি গাড়ি পুরো এলাকা টহল দিচ্ছে।
ততৰণে ঘড়ির পেন্ডুলামে রাত ১২টা বেজে ১৫ মিনিট হওয়ায় ১৭ তারিখ হয়ে গেছে। অকস্মাৎ একটি কালো রঙের ট্যাক্সিক্যাব এসে থামল মেডিক্যালের গেটে। গাড়িতে থাকা কয়েকজন লোক রক্তাক্ত এক যুবককে গেটে ফেলেই দ্রম্নত বেগে পালিয়ে গেল। রক্তাক্ত ব্যক্তিটির গোঙানির শব্দ তখনও শোনা যাচ্ছিল। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিত হয়ে গেলেও সেখানে পান-বিড়ির দোকানিরা মুহূর্তেই রক্তাক্ত যুবককে তুলে ভেতরে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যায়।
কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণার পর পকেট হাতড়ে কাগজপত্র থেকে জানা গেল সে কেরানীগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক মৃধা ওয়ফে স্বপন। এলোপাতাড়ি গুলি আর চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
গুলিতে ঝাঁঝরা করে কিংবা নৃশংসভাবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করে দেশময় আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য মহলবিশেষের একাজে জঙ্গী থেকে শুরম্ন করে সর্বহারা, এমনকি শীর্ষ সন্ত্রাসীরা পর্যনত্ম একজোট হয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন এবং রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়ার সর্বহারা কিলারদের ৪ শতাধিক সদস্য বর্তমানে রাজধানীতে অাঁখড়া গেড়েছে।
জামায়াত-শিবিরের অসত্মিত্বের সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিএনপি বা ছাত্রদল তাদের সরাসরি সমর্থন না দিলেও সরকারকে বেকায়দায় ফেলে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চিনত্মায় তাদের বিভিন্ন অংশ প্রয়োজনানুযায়ী একাজে সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকা ঢালা হচ্ছে পানির মতো। প্রায় ২৫৭ ইসলামভিত্তিক এনজিও এবং দাতা প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশ থেকে বিভিন্ন ইসলামী প্রকল্পের নামে কাঁরি কাঁরি টাকা এনে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মানব উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের মতে, এসব ইসলামভিত্তিক এনজিওর সৃষ্টিই হয়েছিল জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে সক্রিয় কারাগারে থাকা সাবেক ছাত্রদল নেতা পিচ্চি হেলাল এবং ভারতে অবস্থানকারী এবং পুলিশের দাবি মতে ভারতে গ্রেফতার হওয়া ডাকাত শহীদ কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের মাধ্যমে এই সুযোগে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কিলিং বাবদ কন্ট্রাক্টের অর্থ প্রাপ্তির পাশাপাশি ৰেত্রবিশেষে বোনাসও মিলছে। বড় কোন টার্গেট ফেলে দিতে, পারলে কন্ট্রাক্টের টাকার পরিমাণ দুই কোটিতে গিয়েও ঠেকে বলে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর একটি হত্যাকা-ের বেলায় ঘটেছে বলে খোদ পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে! শুধু শীর্ষ সন্ত্রাসী নয়, মাঠ পর্যায়ের কমর্ী যারা টার্গেট সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করে তারাও ৰেত্রবিশেষে বিশেষ টার্গেটের জন্য লৰাধিক টাকা পেমেন্ট গুনে নিচ্ছে। নয়াবাজারের এক ব্যবসায়ীর বেলায় মাঠ পর্যায়ের এক কমর্ী শুধু তথ্য সরবরাহের জন্য দুই লাখ টাকা অর্থলাভের পর বিষয়টি তার পরিবারে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় তিনি অর্থ ফেরত দিতে গিয়ে বিরাগভাজন হয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে কোতোয়ালি থানার একটি সূত্রে জানা গেছে। থানা পুলিশ থেকে শুরম্ন করে সন্ত্রাসী মহল সকলকে শত্রম্ন বানিয়েছেন তিনি। যে কারণে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভবঘুরে যুবক বা ছদ্মবেশী পুলিশের সোর্সরা পর্যনত্ম কিলিং কন্ট্রাক্টের ৰেত্রে মাঠ পর্যায়ের সোর্স হিসেবে কাজ করছে। নামপ্রকাশ না করার মর্তে একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন এবং রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়ার সর্বহারা কিলারদের ৪ শতাধিক সদস্য বর্তমানে রাজধানীতে অাঁখড়া গেড়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে কারাবন্দী বিএনপি নেতার ভাই ছাত্রদলের শীর্ষ নেতা জঙ্গীদের সঙ্গে যোগসাজশ রৰা করছেন। একের পর এক ক্রসফায়ারে জনযুদ্ধ বা এমএল লাল পতাকা নামক সর্বহারা সংগঠনের কমর্ী নিহত হওয়ায় কোণঠাসা সর্বহারাদের একটি অংশ এবং ভাড়ায় খাটা সর্বহারা কিলার সদস্যদের মোটা টাকার বিনিময়ে হাত করা হয়েছে। এতসবের মূল কারণই হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন করতে সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ। সরকার দেশে বিদেশে নানামুখী চাপ ও প্রতিকূলতার মধ্যেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করতে সৰম হওয়ায় যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযুক্ত জামায়াত নেতৃত্বের ভিত কেঁপে উঠেছে। যে কারণে নির্যাতনের পর হত্যা এবং রগ কাটার মতো নগ্ন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার পুরনো লেবাসে বেরিয়ে এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবির নামধারী জামায়াতের ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনের কমর্ীরা। উচ্চ আদালতে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় জামায়াতের অসত্মিত্বের সঙ্কটও তাদের মরিয়া করে তুলেছে।

No comments

Powered by Blogger.