যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ঐক্যবদ্ধ হওয়াই এখন প্রধান কর্তব্য

 নানা আয়োজনে দেশের মানুষ স্মরণ করল ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহাকে। এ উপলৰে রাজধানীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র সমিতি এক আলোচনাসভার আয়োজন করে।
বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাসহ বিশিষ্টজনরা আলোচনায় অংশ নেন। তাঁরা বলেন, শামসুজ্জোহার স্বপ্ন বাসত্মবায়নের সময় এখনই। মহাজোট সরকারের চিনত্মা ও পরিকল্পনার সঙ্গে তাঁর স্বপ্নের মিল আছে। তাই বর্তমান সরকারই পারে শামসুজ্জোহার স্বপ্ন বাসত্মবায়ন করতে। একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে। এজন্য সরকারকে আনত্মরিকভাবে কাজ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে বিজয় সুনিশ্চিত করতে সাবধানে চলতে হবে। নিশ্চিহ্ন করতে হবে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গী গোষ্ঠীকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, জাতির সামনে এখন প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সংসদে গঠনমূলক আলোচনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। অন্যথায় পরিণতি ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কম। বক্তারা শামসুজ্জোহা স্মরণে সরকারের কাছে তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিবছরের ১৮ ফেব্রম্নয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে শিৰক দিবস ঘোষণা ও পালন, রাজধানী ঢাকায় একটি রাসত্মা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হল শামসুজ্জোহার নামে নামকরণ। শামসুজ্জোহা স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয় বৃহস্পতিবার।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত আলোচনাসভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, '৬৯-এর গণঅভু্যত্থানের চেতনা না এলে '৭১ হতো না। '৬৯-এর অভু্যত্থানে ড. শামসুজ্জোহাকে চিহ্নিত করে খুন করা হয়েছিল। তাঁর চেতনাকে বাসত্মবে রূপ দিতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখনই তাঁর চেতনা বাসত্মবায়নের মুখ্য সময়। চেতনা বাসত্মবায়ন করতে হলে টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা- থেকে সরকারী দলের বাইরে থাকতে হবে। জাসদ সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, জোহার বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার দাগ টানা হয়। সে দাগের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আজকের বাংলাদেশ। তিনি বলেন, মহাজোটের বিজয় ধরে রাখতে হলে আগামী চার বছর আমাদের পরীৰা দিতে হবে। প্রতিহত করতে হবে সাম্প্রদায়িক চক্রকে। প্রতিরোধ করতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের ফণা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন ও শেষ করার মধ্য দিয়ে আমাদের টিকে থাকার পথ সুগম হবে। জাতির সামনে এখন প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আর কোন বিষয়ে সংসদের ভেতরে বাইরে বিতর্ক সৃষ্টি ঠিক হবে না। তিনি বলেন, টেন্ডার দখলের বদলে সাম্প্রদায়িকতার ঘাঁটি দখল করম্নন। অনত্মর্দ্বন্দ্ব বন্ধ করম্নন। তাহলে জোহার স্বপ্ন বাসত্মবায়ন হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ১৯৬৯ সালে একজন জোহার মৃতু্য লৰ কোটি মানুষের মনে আগুন জ্বালিয়েছিল। যার প্রেৰিতে প্রতিপৰ মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল সেদিন। প্রগতিশীল সমাজ গড়ার যাত্রায় বর্তমান সরকারের এক বছরের প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতা আসেনি। আমাদের আকাঙ্ৰা বর্তমান সরকার অসাম্প্রদায়িক, ৰুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে এবার যেন ব্যর্থ না হয়। এবার যেন মানুষের মুখে হাসি ফোটে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খোন্দকার বজলুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র সমিতির মহাসচিব আইয়ূব আলী খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুর রাজ্জাক, মোসলেম আলী খান, জাহাঙ্গীর কবীর রানা, মিজানুর রহমান খান, চৌধুরী হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ।
রাবিতে ড. জোহা স্মারক বক্তৃতা
স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন যারা রগকাটা, হত্যার রাজনীতি করে, তাদের এক বিশেষ উদ্দেশ্য আছে যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ, আকাঙ্ৰা সব কিছুর বিরম্নদ্ধে যায়। তাদের প্রতিহত করতেই হবে। কথা ওঠে ছাত্ররা এ সবের সাহস ও প্রশ্রয় পায় শিকদেরই ছত্রছায়ায়। সময় এসেছে বললে ভুল হবে, সময় দ্রম্নত ফুরিয়ে যাচ্ছে সেই অবস্থা থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসার। শিক সমাজ আমাদের আলোকবর্তিকা, মাথার মুকুট। তাঁদেরকে সেই অবস্থানেই পেতে চাই। বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে শিক দিবসের (ড. জোহা দিবস) অনুষ্ঠানে 'অমৃতপিয়াসী চিত্তের সন্ধানে_ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন ও বাসত্মবতা' শীর্ষক জোহা স্মারক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. আব্দুস সোবহান, উপউপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ নূরম্নলস্নাহ্ ও কোষাধ্য প্রফেসর এম. আব্দুর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে শহীদ ড. জোহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নীরবতা পালন ও তাঁর রম্নহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দিবসের কর্মসূচিতে ছিল বৃহস্পতিবার ভোরে প্রশাসনের ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে রাবি উপাচার্য, উপউপাচার্য, কোষাধ্য ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকতর্াগণ শহীদ ড. জোহার মাজার ও জোহার স্মৃতিফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও নীরবতা পালন করেন। এ ছাড়া রসায়ন বিভাগ, শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, অফিসার-কর্মচারী সমিতি ও ইউনিয়ন পৃথকভাবে প্রভাত ফেরিসহ শহীদ জোহার মাজার ও স্মৃতিফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। সকাল ৯টায় অফিসার সমিতির কার্যালয়ে শহীদ জোহা স্মরণে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। দিবসের কর্মসূচীর মধ্যে ছিল রসায়ন বিভাগে কোরানখানি, বাদ জোহর শহীদ জোহার মাজারে বিশেষ মোনাজাত এবং বিকেলে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে শহীদ ড. জোহা স্মারকপত্রের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনাসভা। এদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যনত্ম দর্শকদের জন্য খোলা ছিল।

No comments

Powered by Blogger.