সামরিক শাসনামলের কিছু অধ্যাদেশের বৈধতা দেয়া হচ্ছে- প্রশাসনিক কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মন্ত্রিসভায় দুটি বিশেষ আইনের খসড়া অনুমোদন

 প্রশাসনিক কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সামরিক শাসনামলে জারি করা কিছু অধ্যাদেশের বৈধতা দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলের ১৭২টি অধ্যাদেশের মধ্যে কয়েকটি অধ্যাদেশ অব্যাহত রাখতে দু’টি বিশেষ আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
আদালত সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী খারিজ করে দেয়ার ফলে এগুলো অবৈধ হয়ে যায়। এছাড়া মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদের স্পীকার ডেপুটি স্পীকারের ঐচ্ছিক তহবিলের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা দি প্রেসিডেন্টস (রিমিউনেরেশন এ্যান্ড প্রিভিলেজেস) এ্যাক্ট এবং দি স্পীকার এ্যান্ড ডেপুটি স্পীকার (রিমিউনেরেশন এ্যান্ড প্রিভিলেজেস) এ্যাক্টের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
সত্তর ও আশির দশকে সামরিক শাসন আমলে এ ধরনের ১৭২টি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। আদালত এগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এসব অধ্যাদেশের মধ্যে ৯১টি জারি করা হয় ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ’৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। ৮১টি জারি করা হয় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নবেম্বর পর্যন্ত সামরিক শাসন আমলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, মন্ত্রী, ডেপুটি স্পীকার, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের পারিতোষিক বিল বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ বিল বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বিল বাড়ানোর দরকার নেই। এ বিল বাড়িয়ে টেলিভিশনের টকশোর খোরাক বাড়িয়ে লাভ কী?
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঞা বলেন, বিগত আমলের কিছু অধ্যাদেশের বৈধতা দিতে আইন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আইন পর্যালোচনা করে অধ্যাদেশ জারি করবে। জানা গেছে, এ সংক্রান্ত দু’টি পৃথক অধ্যাদেশ জারি করা হবে। সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ’৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৯১টি অধ্যাদেশ এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নবেম্বর পর্যন্ত ৮১টি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে জারি করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা হয়। সচিব বলেন, বাতিল করা এসব অধ্যাদেশের আওতায় যে সকল অধ্যাদেশের কার্যক্রম এখনও চলছে। প্রশাসনিক কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সেগুলোর কিছু কিছুকে বৈধতা দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সে কারণে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ও স্পীকারের ঐচ্ছিক তহবিল বাড়ানোর প্রসঙ্গে সচিব বলেন, বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ও স্পীকারের ঐচ্ছিক তহবিল বাড়াতে পৃথক দুটি আইনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। আইনানুযায়ী রাষ্ট্রপতির ঐচ্ছিক তহবিলের পরিমাণ হবে ২ কোটি টাকা, যা আগে ছিল ১ কোটি টাকা। স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকারের ঐচ্ছিক তহবিলের পরিমাণ হবে ১০ লাখ টাকা, যা আগে ছিল সাড়ে চার লাখ টাকা। এ তহবিল থেকে দুস্থ অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করা হয়। দুস্থ ও অসহায়দের কথা চিন্তা করেই এ তহবিলের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ঐচ্ছিক তহবিল বাড়াতে প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অসম্মতি জানালে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর ভ্রমণ ভাতার পরিমাণ বাড়াতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব আসলে তা ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট’ বা বিআরটির পরিচালনায় ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ কোম্পানি পরিচালনায় যোগাযোগ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া বৈঠকে ওয়াকফ সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংশোধনী আইনে ওয়াকফ প্রশাসকের ক্ষমতা বাড়নো হয়েছে। সস্পত্তি রক্ষার্থে এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদে তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেটের ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বৈঠকে জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ কমিটির প্রধান হবেন অর্থমন্ত্রী। কমিটিতে আরও থাকবেন কৃষিমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও পরিবেশ এবং বনমন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.