হাইকোর্টের রায় ছিল পক্ষপাতদুষ্ট ও বিকৃত- জেল হত্যা মামলা ॥ শুনানির পর আনি

জাতীয় চার নেতা হত্যা (জেলা হত্যা) মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক বলেছেন, এ মামলায় হাইকোর্টের রায় ছিল বিকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে তা আদালতের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারব।
বুধবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার শুনানি মুলতবি হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ ছাড়া বুধবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ নাসিম। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার আপীল শুনানি শুরু হওয়ায় আমরা জাতীয় চার নেতার পরিবার আশান্বিত হয়েছি। এ মামলায় হাইকোর্টে যে অযৌক্তিক রায় দেয়া হয়েছিল, আমরা মনে করি আপীল বিভাগে তা বাতিল হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই। আশা করি ন্যায় বিচারের মাধ্যমে এ আপীল নিষ্পত্তি হবে। আত্মস্বীকৃত খুনীদের মৃত্যুদ- হবে বলেও আশা করছি।
এর আগে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় আপীল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী উপস্থাপন শেষ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ ছাড়া এ মামলায় আদালত নিযুক্ত আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার মোট তিন সাক্ষীর জবানবন্দী উপস্থাপন করেছি। একজন হচ্ছেন ক. শাফায়েত জামিল, তৎকালীন বিশেষ শাখার ডিআইজি ই এ চৌধুরী ও এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায় বিকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে তা আদালতের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারব।
এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দী উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হবে। তারপর আশা করি রায় হতে আর বেশি সময় লাগবে না।
এর আগে ১৫ জানুয়ারি ও ২২ জানুয়ারি মঙ্গলবার আপীল বিভাগে সাক্ষীদের জবানবন্দী উপস্থাপন করেছেন আনিসুল হক।
১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোঃ মতিউর রহমান রায় দেন। রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এল ডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দেন। রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপীলের আবেদন (লিভ টু আপীল) করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপীল আবেদন (আপীল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপীল বিভাগ মঞ্জুর করে। একই সঙ্গে ওই আদেশে দফাদার মারফত আলী শাহ ও এল ডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আপীল বিভাগ। অন্যথায় এ দু’জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়া আদালত ৩০ দিনের মধ্যে আপীলের সংক্ষিপ্তসার তৈরি করে জমা দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ গত বছর ৪ নবেম্বর তা জমা দেয়। এরপর ১৫ জানুয়ারি আপীল আবেদনের শুনানি শুরু হলো।

No comments

Powered by Blogger.