শিষ্টাচার লঙ্ঘনকারী ভারতীয় কূটনীতিক প্রত্যাহারের দাবি- ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বক্তৃতাবাজি করলে চলবে না'

কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার একে গোস্বামীকে প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানিয়েছেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এমএ লতিফ এমপি।
তিনি বলেন, দুদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের বৈঠকে ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তি সহজীকরণের জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের দাবির জবাবে এ কূটনৈতিক একেবারে অপ্রাসঙ্গিকভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গ টেনে আনেন, যা খুবই আপত্তিকর এবং অশোভনীয়। দায়িত্বশীল একজন কূটনীতিকের কাছ থেকে আমরা এমন বক্তব্য আশা করি না। বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সফরকারী আসাম ও ত্রিপুরার মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আমরা আশা করি। এদিকে, ভারতীয় কূটনীতিকের দায়িত্ব জ্ঞানহীন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে চট্টগ্রামের সব মহলে। তারাও এ কূটনীতিককে প্রত্যাহারের দাবি জানান। উল্লেখ্য, চিটাগাং চেম্বারে আয়োজিত এক মতবিনিময়সভায় ভারতীয় এ কূটনীতিক বলেছেন, 'শেখ মজিবুর রহমানের মতো বক্তৃতাবাজি করলে চলবে না'।
প্রসঙ্গত, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা, দ্বিপাকি বাণিজ্য প্রসার এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির ল্যে চট্টগ্রামে এক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৭ ফেব্রম্নয়ারি। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এমএ লতিফ এমপির সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন আসামের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পি বোরদোলই, ত্রিপুরার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার একে গোস্বামী। সভায় ছিলেন চিটাগাং চেম্বার ও বিভিন্ন ট্রেড বডির নেতৃবৃন্দও। মতবিনিময়কালে দুদেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে বাংলাদেশ থেকে অধিকহারে পণ্য আমদানির অনুরোধ জানান চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এমএ লতিফ এমপি তাঁর বক্তব্যে চট্টগ্রামের ভৌত অবকাঠামো ও বন্দর ব্যবহার করে ভারতসহ দণি এশিয়ার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এ সময় বিভিন্ন ট্রেড বডির নেতারা ভারতের ভিসা প্রাপ্তিতে হয়রানির প্রসঙ্গ তোলেন। পরে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আপত্তিকর মনত্মব্য করে বসেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার একে গোস্বামী। তিনি বলেন, ট্রানজিট আর ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে ভিসা প্রসঙ্গ আসবে কেন? শেখ মজিবুর রহমানের মতো বক্তৃতাবাজি করলে হবে না। তার এমন বক্তব্যে ুব্ধ হন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এমএ লতিফ এমপি। ােভ প্রকাশ করেন সিনিয়র সহসভাপতি এমএ সালামও। সমস্বরে শুরম্ন হয় হৈ চৈ। একপর্যায়ে আসাম ও ত্রিপুরার দু'মন্ত্রীর হসত্মেেপ পরিস্থিতি শানত্ম হয়।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এমএ লতিফ এমপি এ প্রসঙ্গে সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, একজন অর্ডিনারি মানুষের মুখে এমন বক্তব্য শোভা পায় না। আমরা যেখানে প্রতিবেশী দুদেশের মধ্যে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি সেখানে একজন দায়িত্বশীল কূটনীতিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম টেনে এনে যে মনত্মব্য করেছেন তা সম্পূর্ণ শিষ্টাচারবহির্ভূত। ব্যবসা বাণিজ্য বিষয়ে দ্বিপাকি আলোচনা নানা বিষয় আসতেই পারে। ব্যবসায়ীরা ভিসা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণের দাবি জানাবেন এটিও স্বাভাবিক। ভারতের ভিসা প্রাপ্তিতে ভোগানত্মি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া মানুষদের অধিকাংশেরই ভ্রমণের কারণ চিকিৎসা সংক্রানত্ম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পিতা ভিসা পেলে পুত্রের ভিসা হয় না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, পুত্র ভিসা পেলেন পিতা পেলেন না। এটি অবশ্যই এক ধরনের ভোগানত্মি। যদি এ প্রসঙ্গ উঠিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের দাবি জানানো হয় এর জবাবে বঙ্গবন্ধুর নাম আসে কি করে। এটি তো সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। আমরা চাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হোক এবং ভবিষ্যতে যেন কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহিভর্ূত কোন মনত্মব্য কেউ না করেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ইউনিটের কমান্ডার মোঃ শাহাব উদ্দিনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতির জনকের নাম সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে টেনে এনে যিনি এ ধরনের মনত্মব্য করেন তিনি বাংলাদেশে থেকে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। আমরা অবিলম্বে একে গোস্বামীর প্রত্যাহার চাই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশিস্নষ্ট সকল কার্যালয়ের কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প থেকে দাবি জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে কূটনৈতিক একটি দেশে থেকে সে দেশেরই স্থপতির বিরম্নদ্ধে এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন মনত্মব্য করতে পারেন তার কূটনৈতিক হবার যোগ্যতা রয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহ সংশয় থেকে যায়। তার ব্যাপারে কোন ধরনের সহানুভূতি প্রদর্শনের সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না।
একইভাবে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতারাও ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের এমন বক্তব্যে ুব্ধ। শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, এটি দু'বন্ধুপ্রতিম দেশের জন্যই বিব্রতকর। সে কারণে আমরা চাই ভারত সরকারই এ কূটনীতিককে প্রত্যাহার করে নিক। এ ধরনের বক্তব্য কোন কূটনীতিকের কাছ থেকে কাম্য হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.