নতুন নামে ঢাকা বিমানবন্দর

নতুন নাম হলো রাজধানীর বিমানবন্দরের। এটা একটা আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এটি দেশের সবচেয়ে বড়। এই বিমানবন্দরের যে নাম ছিল সেটাকে একবার বদলানো হয়। এরপর এবার নতুন করে পাল্টানো হলো।
এখন নতুন নাম হয়েছে শাহজালাল (র) আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর। দেশে রাষ্ট্রীয় সামাজিক বা অপরাপর গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনার নাম বদলে যাওয়ার ঘটনার শুরম্ন অনেক আগে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেশ কিছু নতুন নাম করা হয়। তখন মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাসংগ্রাম, লৰ লৰ মানুষের জীবনদান এবং আহত হওয়া, নারীদের অবর্ণনীয় কষ্ট ছিল। সে প্রেৰাপটে দেশের মানুষের এবং সেই সঙ্গে সরকারের মধ্যে কাজ করেছে একই রকমের স্বাভাবিক আবেগ। বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্ট পর্যনত্ম ঠিকঠাকভাবে সবকিছু চলল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর শুরম্ন হলো পাল্টানোর ধারা। কোন রাসত্মা, ভবন বা স্থাপনার নাম রাখা হয় কোন ব্যক্তিকে ভালবেসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। নিজের দেশে প্রাতঃস্মরণীয় বা ঐতিহাসিক পর্যায়ের মানুষের নামও যেমন বিবেচিত হয় নামকরণের ৰেত্রে তেমনি দেশ বিদেশের বহু গুণী মনীষীর নামেও নামকরণ করা হয়। এৰেত্রে দু'একটি নামের রাসত্মার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নামে তাঁর এককালের স্বদেশ এই উপমহাদেশের অনেক স্থানে বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে, তেমনি জার্মানি, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশেও রয়েছে। শেক্সপীয়রের নামে রাসত্মা কলকাতা শহরেও আছে। সেখানে আছে কাজী নজরম্নল ইসলামের নামে রাসত্মা, আমাদের ঢাকাতেও রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই শহরের প্রধান রাসত্মার নাম বঙ্গবন্ধুর নামে রাখা হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারই ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স উদ্যানের নাম সোহরাওয়াদর্ীর নামে রাখে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মানুষ দেখতে থাকে একের পর এক অনেক কিছুর নাম বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বেতার নামটি একটি প্রিয় ও মিষ্টি নাম। পাকিসত্মানী আমলের নামটি ফিরিয়ে আনা হয় ঐ নাম বদলে। এভাবে অনেক দিন চলেছে। তবে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঐ বদলানোর কাজটি হয়েছে ব্যাপকভাবে। মহাজোট সরকার অন্যায়ভাবে বদলে দেয়া প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামের তালিকা তৈরি করে এবং সেগুলো নির্মাণকালীন নাম বহাল করার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। বিগত জোট আমলে নামবদল করা গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধু সেতু, ২০০১ সালে বিগত জোট সরকার এর নাম রাখে যমুনা ব্রিজ। চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম ২০০১ সালের ২৯ অক্টোবরে বদলে জিয়া উদ্যান, বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের নাম ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বদলে দেয়া হয়, রাখা হয় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্রের নাম বদলে দেয়া হয় ২০০২ সালের ৪ এপ্রিল, নতুন নাম রাখা হয় জাতীয় যুব কেন্দ্র, শহীদ সোহরাওয়াদর্ী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাম ২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাখা হয় বেগম খালেদা জিয়া মেডিক্যাল কলেজ। ঐ আমলে আরও কয়েকটি গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনার নাম বদলে দেয়া হয়। যেমন সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম স্টেডিয়াম, এটাকে করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলা স্টেডিয়াম, শহীদ কামারম্নজ্জামান স্টেডিয়াম নাম বদলে করা হয় রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়াম, শহীদ এম মনসুর আলী অডিটরিয়াম, সিরাজগঞ্জ-এর নাম বদলে রাখা হয় ভাষা শহীদ অডিটরিয়াম। সুফিয়া কামাল ন্যাশনাল পাবলিক লাইব্রেরীর নাম পাল্টে বাংলাদেশ গণগ্রন্থাগার করা হয়। সৈয়দ নজরম্নল ইসলামের নামে যমুনায় একটি সেতুর নাম করা হয়েছিল, কিন্তু দুঃখের বিষয়, চারদলীয় জোট সরকারের প্রভাবশালী প্রয়াত এক মন্ত্রীর শ্রদ্ধেয় নজরম্নল ইসলাম সম্পর্কে যে মনত্মব্য করেছিলেন তাতে ঐ মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তাঁর অজ্ঞতা নাকি অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছিল সেটাই প্রশ্ন।
এক সরকার এসে এক নাম রাখবে অন্য সরকার এসে সেটা বদলে অন্য নাম রাখবে_ এটা মানুষ অবশ্যই পছন্দ করে না, কারণ এটা কোন দেশের সরকার বদলের পর গোটা প্রশাসন বদলের মতো ব্যাপার নয়।
জানা গেছে, বিগত জোট আমলে বদলে দেয়া স্থাপনার নতুন নাম বাতিল করে সেগুলোর আগের নাম বহাল রাখা হবে। দিন বদলের কথা বলেছে এই সরকার। নাম বদলের দীর্ঘদিনের অন্যায় কালচারটির স্থায়ী অবসান হওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধু কোন সরকারের বিরাগভাজন হবেন, সৈয়দ নজরম্নলের নাম তাচ্ছিল্যভরে উচ্চারিত হবে এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কী হতে পারে। সুফিয়া কামাল আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের অঙ্গ। এমন নাম বদলে দিলে মানুষ অবাক হবে_ এঁদের নাম বদল করা হয়েছিল কোন মানসিকতায় সেই কথাটি ভেবে দেখা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.