বিরোধী দলকে রাষ্ট্রপতি- যাবতীয় অভিযোগ, প্রস্তাব ও সুপারিশ সংসদে এসে বলুন

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সংসদ বর্জন করবেন না, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাত, নৈরাজ্যের পথ পরিহার করুন। আপনাদের যাবতীয় অভিযোগ, প্রস্তাব, সুপারিশ ও মতামত সংসদের ভেতরে এসে বলুন এবং গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে সহায়তা করুন।’
গতকাল রোববার নবম জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। তাঁর ভাষণের আগে বেলা তিনটা ৩৫ মিনিটে স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ মহাজোট সরকারের মন্ত্রী, সাংসদেরা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধান বিরোধী দলের কর্তব্য ছিল সংসদে এসে তাদের দায়িত্ব পালন করা। সংসদের ভেতরে ও বাইরে সংবিধান সংশোধনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে গঠনমূলক আলোচনায় নিজেদের মতামত ব্যক্ত করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিরোধী দল গত চার বছর নিয়মিতভাবে সংসদীয় কর্মকাণ্ডে বিরত থেকে তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, বিরোধী দল নিজেদের জনগণের প্রতিনিধি ও সেবক হিসেবে গ্রহণ করলে তাদের কর্তব্য ছিল, সংসদে এসে দায়িত্ব পালন করা। কোনো বিশেষ অবস্থানে আঁকড়ে থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত জিইয়ে রাখা কিংবা সংসদ বয়কটের ব্যাপারে অনমনীয় থাকা গণতান্ত্রিক আচরণের পরিপন্থী।
জিল্লুর রহমান বলেন, অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই শুরু করেছিল প্রতিহিংসার রাজনীতি। কিন্তু সন্ত্রাস ও ঘৃণার রাজনীতি কখনো সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। জোট সরকারের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি জন্ম দিয়েছিল একটি ভবনকেন্দ্রিক গণবিরোধী তৎপরতার। এতে সক্রিয় হয়েছিল বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেট। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। গড়ে উঠেছিল মূলধারার অর্থনীতির মধ্যে আরেকটি অর্থনীতি, সরকারের মধ্যে সরকার, রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, নির্বাচন কমিশনের প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সংসদীয় নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে।’ যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, অচিরেই মানবতাবিরোধী অপরাধের সব মামলার রায় দেওয়া সম্ভব হবে।
স্পিকারের অনুমতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তাঁর ১৪৮ পৃষ্ঠার লিখিত ভাষণ সংসদে পঠিত বলে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষে স্পিকার সংসদের অধিবেশন ৩০ জানুয়ারি বিকেল চারটা পর্যন্ত মুলতবি করেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, চলতি অধিবেশন ৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে। বিকেলে স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
অধ্যাদেশ উত্থাপন: ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারি করা কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ২০১৩ এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত জারি করা কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ২০১৩ গতকাল সংসদে উত্থাপন করা হয়। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারী (অবসর) (দ্বিতীয় সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০১২ উত্থাপন করা হয়। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ অধ্যাদেশগুলো উত্থাপন করেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী-সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায়ে সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে জারি করা ১৭৬টি অধ্যাদেশ অবৈধ ঘোষিত হয়। এর মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ ১৭২টি অধ্যাদেশকে বৈধতা দিতে ২২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি দুটি অধ্যাদেশ জারি করেন।

No comments

Powered by Blogger.