শিবিরবিরোধী অভিযান জোরদার- * গ্রেফতার দেড় শ'- * ফারুক হত্যার অন্যতম আসামি রমজান পাবনায় গ্রেফতার- * নাশকতার প্রস্তুতি নেয়ার সময় পরীবাগে ১৯ গ্রেফতার

 সারাদেশে শিবিরবিরোধী চিরুনী অভিযানের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার রাজধানী ঢাকার পল্টনে জামায়াত শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার পল্টন, উত্তরা, শাহবাগ, মতিঝিল এলাকায় ৬৬ জনসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ দেড় শতাধিক শিবির ক্যাডার গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক জিহাদী বই, লিফলেট উদ্ধার করেছে। নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানোর জন্য গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময়ে শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতার করা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা বিৰোভ মিছিলসহ সমাবেশ করার চেষ্টার সময়ে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ, ভাংচুর, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিৰেপ ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির কর্মীদের গ্রেফতার ও চাপাইনবাবগঞ্জে এক শিবির কর্মীর মৃতু্যর ঘটনার প্রতিবাদে মৌলবাদী দলটি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে শুক্রবার দেশের সকল মহানগরীতে বিৰোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর জামায়াত-শিবির রাজধানীর বায়তুল মোকারম থেকে বের হয়ে বিৰোভ মিছিল করে সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের কারণে জামায়াত-শিবির বায়তুল মোকারমের উত্তর গেটের পরিবর্তে পল্টনের গলির ভেতরে মিছিল বের করে। মিছিল বের করে তারা ভাংচুর, রাসত্মা অবরোধ করে সরকারবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক সেস্নাগান দিয়ে অরাজকতার সৃষ্টি করে। পুলিশ তাদের বাধা দেয়। জামায়াত_শিবির পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিৰেপ করে তারা। পুলিশ ধাওয়া দেয়। জামায়াত-শিবির ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরম্ন হয়। জামায়াত শিবিরের তা-বে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। গোটা এলাকাজুড়ে তারা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পুলিশী বাধার মুখে জামায়াত শিবির পল্টন এলাকা থেকে ফকিরাপুল পানির ট্যাংক এলাকায় গিয়ে জড়ো হয়। ফকিরাপুল পানির ট্যাংক এলাকায় সমাবেশ ও ভাংচুর শুরম্ন করলে পুলিশ বাধা দেয়। এখানেও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। পল্টন এলাকা থেকে শুরম্ন করে ফকিরাপুল পানির ট্যাংক ও বিজয়নগর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবিরের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণৰেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে জামায়াত শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করে। এ সময় জামায়াত শিবির ক্যাডররা রাসত্মায় চলাচলরত যানবাহনে ভাংচুর চালায়। মানুষজন ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরম্ন করে। দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ হয়ে গিয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে জামায়াত শিবিরের তা-বলীলায় পল্টন, ফকিরাপুল, বিজয়নগর এলাকায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময়ে পুলিশ গ্রেফতার করে ৯ জনকে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, সরফুদ্দিন (২১), ওবায়েদুলস্নাহ (২৮), সৈয়দ জয়নুল আবেদীন (৪১), শাজাহান (৩৮), এমএ মান্নান (৩৮), কামাল (৩৮), আমিনুর রহমান (৩৬), আহসানুল হক কাকন (৪১), আলাউদ্দিন (২৮)।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর আমীর রফিকুল ইসলাম খান ও সেক্রেটারি এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ শুক্রবার এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন বিনা উস্কানিতে পুলিশ জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর পানিকামান নিৰেপ, বেধড়ক লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার করেছে। বিবৃতিতে তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেনকে নৃশংসভাবে হত্যা ও অন্য ছাত্রলীগ কর্মীদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়ার ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু সারাদেশে ছাত্রশিবিরের বিরম্নদ্ধে চিরম্ননী অভিযানের নির্দেশ দেন। সারাদেশে চিরম্ননী অভিযানের দ্বিতীয় দিনে রাজধানী ঢাকার পল্টনে ৯ জনকে গ্রেফতার করা ছাড়াও উত্তরায় ৩৬ জন, শাহবাগে ২১ জনসহ অর্ধশতাধিক গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীতে অর্ধশতাধিক গ্রেফতারসহ সারাদেশে দেড় শতাধিক শিবির ক্যাডার গ্রেফতার হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর রমনা জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শাহবাগ এলাকার পরীবাগের একটি মেসে শিবির ক্যাডাররা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে নাশকতা কর্মকা- ঘটানোর পরিকল্পনা করার ব্যাপারে গোপন সূত্রে খবর পায় পুলিশ। শুক্রবার ভোররাতে পরীবাগের মেস থেকে পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিৰার্থীসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর পর আদালত তাদের জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী ক্যাডার বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মহব্বত আলী (শিবিরের ঢাবি শাখার প্রচার সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের শিৰার্থী), আবুল কাশেম (শিবিরের অর্থ সম্পাদক ও ইসলামিক শিৰা বিভাগের শিৰার্থী), জামালউদ্দিন (শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক ও ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিৰার্থী), হাফিজুর রহমান হাবিব (রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিৰার্থী), সাখাওয়াত হোসেন (অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিৰার্থী), হাদিয়ার রহমান (প্রাণী বিভাগের শিৰার্থী), শফিউল খান (লোকপ্রশাসনের ছাত্র), আবদুল গফুর (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র), ময়েনউদ্দিন (ইংরেজী প্রথম বর্ষের ছাত্র), মোঃ কবির (ফলিত রসায়ন বিভাগের ছাত্র), ইনসানাল (সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র), মুনতাসির মামুন (সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র), আতিকুল ইসলাম (সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র), এহতেসামুল হক (ফলিত রসায়ন বিভাগের ছাত্র), আমিনুল ইসলাম (প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র), ইব্রাহিম খলিল (আরবি বিভাগের ছাত্র), মাসুদ রানা (উইমেন এ্যান্ড স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র)। এছাড়া আইবিআইটির ছাত্র আলমগীর হোসেন ও ঢাকা কলেজের ছাত্র মোঃ ছাবি্বরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। রাত প্রায় ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পেছনের একটি মেস থেকে গ্রেফতার করা হয় ২১ জনকে। এর মধ্যে ১৯ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
উত্তরা জোনের পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরায় শিবির ক্যাডার গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে নাশকতা কর্মকা- চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। উত্তরার ১৪ নং সেক্টরের ১৮ নং রোডের ৪৫ নং বাসার একটি মেসে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ৫০ জনকে আটক করা হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছে জিহাদী বই, লিফলেট পাওয়া গেছে। অপর ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রামের জামায়াতের নায়েবে আমীর আহসানউলস্নাহসহ ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট ও চৌহাট্টা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত_শিবিরের দফায় দফায় সংঘর্ষে ২০ জন আহত ও ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পাবনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারম্নক হত্যার অন্যতম আসামি শিবির ক্যাডার রমজান আলী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত রমজান আলী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের ছাত্র। ফারম্নক হোসেনকে খুন করার পর সে রাজশাহী থেকে পালিয়ে এসে পাবনায় আত্মগোপন করে। পুলিশ খবর পেয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
বরিশালে জামায়াত শিবির বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করার সময়ে ৩ জামায়াত শিবিরকে গ্রেফতার করেছে। নাটোর জামায়াতে ইসলামীর অফিসে বিৰুব্ধ জনতা অগি্নসংযোগ, জয়পুরহাটের ২০টি ছাত্রাবাসে গোয়েন্দা নজরদারি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিবির ক্যাডাররা পালিয়ে গেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার পর শিবির ক্যাডাররা পালিয়ে গিয়ে আশেপাশের এলাকায় আত্মগোপন করেছে। রাজশাহীর বাগমারায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩ শিবির ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, ওহাব, জিয়া ও আবদুস সালাম। টাংগাইলে ১৪ শিবির কর্মীকে গ্রেফতারের পর পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.