খালেদা জিয়ার অফিসে বোমা হামলার পরিকল্পনাটি পবনের- আটক বন্ধু শোভনের স্বীকারোক্তি

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পর পর দু'বার বোমা হামলার নেপথ্য নায়ক বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আকতার হামিদ পবন।
খালেদা জিয়ার আনুকল্য পেতেই পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা চালায় সে। তবে বোমা হামলার বিষয়টি বিএনপি-জামায়াত জোটের দলীয় নয়া কৌশল, না পবনের ব্যক্তিগত কৌশল; সে বিষয়ে তদনত্ম চলছে। ছাত্রদলের একটি গ্রম্নপ এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত। ঘটনার মূল নায়ক পবনকে হন্যে হয়ে খুঁজছে গোয়েন্দারা। এদিকে প্রদীপকে জেলহাজতে ও শোভনকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
গত ২৩ ফেব্রম্নয়ারি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। ওই দিনই প্রদীপ সাহা নামে এক ছাত্রদল নেতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এর আগেও খালেদা জিয়ার অফিসের পাশ থেকে দু'টি বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সিকিউরিটি সেলের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর মেজর (অব) হানিফ বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। বোমা কৌশল নিয়ে বিএনপি খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এমনকি জাতীয় সংসদে তুলকালাম কা- ঘটিয়ে দেয়। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার এসএসএফ নিরাপত্তা দাবি করে। পরবর্তীতে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হসত্মানত্মর করা হয়। প্রদীপ সাহা জিজ্ঞাসাবাদে আসল রহস্য প্রকাশ করে দেয়। তার তথ্যমতে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের ডিসি মাইনুল হাসানের নেতৃত্বে এডিসি মোলস্না নজরম্নল ইসলাম রাজধানীর কলাবাগানে অভিযান চালায়। কলাবাগানের ১০৬ নম্বর বাড়ি থেকে হামলার কাজে ব্যবহৃত লাল রঙের প্রাইভেটকারটি জব্দ করে। প্রাইভেটকারের সূত্র ধরেই বসুন্ধরা সিটির সামনে থেকে গ্রেফতার হয় পবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবুল কালাম আজাদ শোভন। পরে শোভনের তথ্যমতে, শোভনের প্রাইভেটকারের পাশেই রাখা পবনের মার্সিডিস প্রাইভেটকারটিও জব্দ করে গোয়েন্দারা। প্রদীপ সাহা জানায়, নেত্রীর কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত। সে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাত ৯টায় নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানা ছাত্রদলের সভাপতি ফারম্নককে সঙ্গে নিয়ে মতিঝিল থেকে মোটরসাইকেলযোগে তারা গুলশানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। শোভন জানায়, ঘটনাস্থলে পেঁৗছার পর ফারম্নক তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর আগে পবন শোভনের বাসায় যায়। বাসায় যাওয়ার সময় পবনের গাড়ির চাকা নষ্ট হয়। এ সময় পবন তার বাসায় যায়। গাড়িটি তার বাসায় রাখে। পরে তারা দু'জনে শোভনের লাল গাড়িতে গুলশান পেঁৗছে চেয়ারপার্সনের অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। পবন গাড়ি থেকে নেমে পার্টি অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। সে গাড়িতেই বসে থাকে। এ সময় প্রদীপ ও ফারম্নক ঘটনাস্থলে পেঁৗছে। ফারম্নক মোটরসাইকেল থেকে নেমে শোভনের সঙ্গে কথা বলে। পরে ফারম্নক প্রদীপকে বলে একটু পরেই এখানে দুর্ঘটনা ঘটবে। এ কথা বলেই ফারম্নক শোভনের গাড়িতে ওঠে। ঠিক এ সময় শোভনের গাড়িতে দুই যুবক উঠে বসে। উঠেই যুবকদ্বয় গাড়িতে বসেই খালেদা জিয়ার কার্যালয় লৰ্য করে পর পর ২টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এদিকে আগ থেকেই পবন ওই এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় আহত হওয়ার ভান করে পবন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পবনের অনুগতদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়, খালেদা জিয়াকে হত্যার জন্য তাঁর কার্যালয়ে বোমা হামলা হয়েছে। এতে আকতার হামিদ পবন মারাত্মক আহত হয়েছেন। দ্রম্নত পবনকে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, পবনের দেহে কোন বোমা হামলার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। সে বুকের ব্যথায় ওই দিন হাসপাতালের আইসিইউেিত র্ভির্ত হয়েছিল। বোমা হামলায় পবনের আহত হওয়ার বিষয়টি নিছক গুজব। বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে দ্রম্নত প্রদীপ পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু জনতা ধাওয়া করে প্রদীপকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। যারা বোমা হামলা চালিয়ে ছিল তারা ভাড়া করা বোমা হামলাকারী ছিল। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
শোভন জানায়, পবন ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে নিজেকে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেতে এ কাজ করেছে। কারণ বোমা হামলায় পবন আহত হলে খালেদা জিয়ার দরদ বেড়ে যেতে পারে তার ওপর। এতেই সে ভাল পর্যায়ে চলে যাবে। তাছাড়া পিতা বিএনপির মহাসচিব থাকায় বাড়তি সুবিধাও পাওয়া যাবে। বোমা হামলার বিষয়টি আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হতো। তবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা ও বর্তমান সরকারের রাজনীতি ঘোলা করতে পবনকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি-জামায়াত জোট এ হামলা চালিয়ে ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। ঘটনার সঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় একটি গ্রম্নপ সরাসরি জড়িত। এছাড়া ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের একটি গ্রম্নপও জড়িত। গোয়েন্দারা বলছে, বোমা হামলার নাটক সাজানোর বিষয়টি বিএনপি-জামায়াতের না পবনের ব্যক্তিগত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আকতার হামিদ পবনকে গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার অমূল্য ভূষণ বডু.য়া ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দৰিণ জোনের ডিসি মনিরম্নল ইসলামসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.