সংরক্ষিত বন দখল করে শুঁটকিপল্লি by এম জসীম উদ্দীন

বরগুনার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া সংরক্ষিত বনসংলগ্ন আশারচরে শুঁটকিপল্লি গড়ে তোলায় বন ও জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। গত দেড় মাসে সেখানে প্রায় ২০০টি খুপরি এবং মাছ শুকানোর জন্য কয়েক শ মাচা তৈরি করা হয়েছে।
এখানে বসবাসকারী প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দা বনের গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৯২৭ সালের বন আইনের ২৬ নম্বর ধারায় বলা আছে, সংরক্ষিত বনে অনুপ্রবেশ, বসতি স্থাপন, ভূমির পরিবর্তন, গাছ কাটা, আগুন জ্বালানোসহ ক্ষতিকর যেকোনো কাজ বেআইনি।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালে টেংরাগিরি বনের আশপাশে আরও ১১ হাজার একর এলাকা (আশার চরসহ) নিয়ে প্যারাবন তৈরি করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর সরেজমিনে দেখা গেছে, নলবুনিয়া সংরক্ষিত বন ও বনঘেঁষা আশারচরের প্রায় আড়াই কিলোমিটারজুড়ে শুঁটকি তৈরির মাচা ও জেলেদের থাকার জন্য বড় আকারের প্রায় ৬০টি এবং ছোট আকারের প্রায় ১৫০টি খুপরি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে কেওড়া, গেওয়া গাছ, বাঁশ ও হোগলা। প্রায় দেড় হাজার জেলে ও শ্রমিক সংরক্ষিত বনের কাঠ দৈনন্দিন রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। চরের মধ্যে অসংখ্য গাছের কাটা গোড়া বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশক ধরে শুঁটকি তৈরির মৌসুমে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজি ও তাঁর পরিবারের লোকজন খুলনা, সাতক্ষীরা ও মঠবাড়িয়া থেকে শত শত জেলে এনে আশার চরে শুঁটকিপল্লি স্থাপন করেন। জেলেদের জাল, নৌকা ও খোরাকি বাবদ আগাম কয়েক কোটি টাকা দাদন দেন তাঁরা। এবার প্রায় ৯০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রায় ৪০০ জেলে সাগরে মাছ ধরার জন্য এই চরে বসতি গেড়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, নিশানবাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজি, তাঁর দাদা ময়েজউদ্দিন ফরাজি, চাচা সোনাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনুস ফরাজি ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা কবির হোসেন আকন এই মৌসুমে আশার চরকে পুঁজি করে নানাভাবে আয়ের জন্য এখানে জেলেদের শুঁটকি তৈরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
দুলাল ফরাজি অবশ্য বলেন, ‘আমি এবার এই ব্যবসায় নেই। আমার বাবা, ভাই ও চাচা ব্যবসা করছেন।’ ইউনুস ফরাজি জানান, শুঁটকি ব্যবসায়ী ও জেলেরা জ্বালানি ব্যবহারের জন্য খুপরিপ্রতি তিন হাজার টাকা করে বন বিভাগকে দিয়েছেন। তাঁর লোকজন বনে যায় না ও বনের কাঠও ব্যবহার করেন না। ব্যবসায়ী কবির হোসেন আকনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, এই চরে থেকে শুঁটকি তৈরির জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ঘরপ্রতি এককালীন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা এবং সপ্তাহে ৪০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। প্রতিটি ট্রলার ওই কর্মকর্তাদের তিন হাজার টাকা এবং জেলে ও ব্যবসায়ীরা জলদস্যুদের সাত হাজার টাকা করে চাঁদা দিচ্ছেন।
নলবুনিয়া বিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘জেলেরা রাজস্ব দিয়েই এখানে মাছ ধরে এবং বন থেকে যে জ্বলানি কাঠ নেন; সে জন্য কিছু রাজস্ব আদায় করি।’ ঘরপ্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটু দূরে আছি। এসব কথা ফোনে বলা যায় না। আপনি অফিসে আসেন কথা হবে।’
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো বলেন, ‘সংরক্ষিত বনের আশপাশে এ ধরনের অস্থায়ী পল্লি নির্মাণের সুযোগ আছে, তবে বনের ক্ষতি করে নয়। বিষয়টি আমি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.