বীর মুক্তিযোদ্ধা- তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

৬০৪ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন বীর প্রতীক একমাত্র তিনিই অঙ্গীকার রক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধকালে কয়েকজন সহযোদ্ধা মিলে একটি অঙ্গীকার করেছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁরা সবাই নিজ নিজ এলাকায় যাবেন। সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে সামাজিক ও কৃষি উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন। স্বাধীনতার পর তাঁর সহযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই তাঁর এ অঙ্গীকার রক্ষা করেন। নিজ এলাকায় গিয়ে এ কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ কাজে এখনো তিনি যুক্ত।
আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের একজন দুর্ধর্ষ সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে অবরুদ্ধ ঢাকায় বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। এর মধ্যে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের (পরে শেরাটন, এখন রূপসী বাংলা) অপারেশন অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩১১। গেজেটে নাম মোহাম্মদ জিয়া।
স্বাধীনতার প্রায় ২১ বছর পর ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা ও পদক প্রদান করে। খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন অনেক খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে আরও দুবার এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন কোনো সংবর্ধনায় যোগ দেননি এবং পদকও গ্রহণ করেননি। বীরত্বসূচক এ খেতাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মে মাস থেকে পাকিস্তানের সামরিক সরকার বারবার প্রচার করছিল, বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তান) পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। কোনো যুদ্ধ-পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। বিদেশিরা যাতে এ প্রচারের ফাঁদে না পড়েন, সে জন্য মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা ৯ জুন ঢাকার হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে দুঃসাহসিক একটি অপারেশন করেন।
এই অপারেশনে আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সহযোদ্ধা ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (বীর বিক্রম), কামরুল হক ওরফে স্বপন (বীর বিক্রম), হাবিবুল আলম (বীর প্রতীক)। তাঁরা যে গাড়িতে করে এসে অপারেশন করেন, সেই গাড়ি চালান বাদল নামের একজন। তিনি ছিলেন পাকিস্তান টিভির ঢাকা কেন্দ্রের ক্যামেরাম্যান।
হোটেলের গেটে প্রহরারত পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আলী আহমদ জিয়াউদ্দিনসহ তিনজন গাড়ি থেকে নেমে চারটি গ্রেনেড ছোড়েন। তখন পোর্চে দাঁড়ানো ছিল বিদেশি প্রতিনিধিদের ব্যবহূত গাড়িবহর। সেগুলো দু-তিন মিনিট আগে বিদেশি প্রতিনিধিদের নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করে।
প্রথম ও চতুর্থ গ্রেনেড ছোড়েন আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন। প্রথম গ্রেনেড বিস্ফোরণে বহরের শেভ্রোলেট গাড়িটি কয়েক ফুট ওপরে উঠে নিচে পড়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেনেড ছোড়েন যথাক্রমে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও হাবিবুল আলম।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল এবং পাকিস্তানকে সাহায্য প্রদানকারী কনসোর্টিয়ামের চেয়ারম্যান তখন বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তাঁরা উঠেছিলেন ইন্টার কন্টিনেন্টালে। উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তানের বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিরূপণ ও বৈদেশিক সাহায্যের চাহিদা এবং অন্যান্য পরিস্থিতি যাচাই করা। তাঁরা ঢাকায় থাকাকালে তাঁদের পিলে চমকে দিয়ে ইন্টার কন্টিনেন্টাল প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে। এই অপারেশনের বিশদ বর্ণনা আছে হাবিবুল আলমের ইংরেজিতে লিখিত ব্রেভ অব হার্ট বইয়ে।
আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে ভারতে যান। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন।
আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মুক্তারনগর গ্রামে। এখানেই তিনি বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম এ বি এম রাফিউদ্দিন, মা সুলতানা রাজিয়া।
আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক, হাবিবুল আলম বীর প্রতীক এবং শহীদ শাফী ইমাম রুমী স্মারকগ্রন্থ।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
ৎashedtৎ@pৎothom-alo.info

No comments

Powered by Blogger.