অতিথি পাখি শিকার-নিজের পায়ে কুড়াল মারা কেন?

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় শিকারির ফাঁদে আটক তিন অতিথি পাখির বেদনা-জাগানিয়া আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে শুক্রবার সমকালের লোকালয় পাতায়। আমরা জানি, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আকাশের সব রঙ আর রোদ পাখায় মেখে তারা বাংলাদেশে এসেছিল শীতকালকে মনোরম করে তুলতে।
এও জানা কথা, কুয়াশা আর শিশিরে খানিকটা জবুথবু নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও পাহাড় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে মূলত অতিথি পাখির আগমনে। ইট-কাঠের নগরী সংলগ্ন প্রাণহীন জলাশয়েও মেলে কলকাকলি। কেবল নান্দনিক ব্যাপার নয়; অতিথি পাখির পরিভ্রমণের সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধিও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু পাখি শিকারিদের অপতৎপরতায় এসব জীবন ও সম্ভাবনার উল্লেখযোগ্য অংশই বিনষ্ট হয়। ফাঁদ পেতে দু'একটি পাখি ধরা কেবল নয়; বিষমাখা টোপ ফেলে শত শত পাখি ধরার করুণ চিত্রও আমরা হাওরাঞ্চলে দেখেছি। নদীর চর, বিল ও অন্যান্য জলাশয়ে আসা পাখিরাও রেহাই পায় না। অস্বীকার করা যাবে না যে, অতিথিসহ সব ধরনের পাখি আটক কিংবা মারার ক্ষেত্রে আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সেটা এতটাই অকার্যকর যে, খোদ রাজধানীতেও অতিথি পাখি ফেরি করতে দেখা যায়। আর হাওর কিংবা বিল সংলগ্ন শহরগুলোতে হোটেলে হোটেলে শীতকালীন 'আইটেম' হিসেবে স্থান পায় প্রকৃতির এই সন্তানরা। এমন নিষ্ঠুরতা নয়, পাখি সুরক্ষা আইনের প্রয়োগ দেখতে চাই আমরা। স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হলে প্রকৃতিবিনাশী তৎপরতাটি বন্ধ কঠিন নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। কোথাও কোথাও প্রশাসনই শিকারিদের মদদ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পাখি শিকারের ক্ষেত্রে শূন্যসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে প্রশাসন প্রমাণ দিক যে অভিযোগটি অসত্য। আইন প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যাবে না। কারণ, সচেতন নাগরিকই হতে পারে পাখি ও প্রকৃতি রক্ষার উত্তম প্রহরী। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষায় কর্মরত বেসরকারি সংগঠন ও উদ্যোগগুলো এগিয়ে আসতে পারে। বস্তুত সবারই এগিয়ে আসা উচিত। নিছক রসনা তৃপ্তির জন্য আমরা কীভাবে নিজের পায়ে কুড়াল মারছি, সবাই আন্তরিক হলে তা সাধারণ মানুষকে বোঝানো অসম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.