সরকারি জমি নয়ছয় করা কার স্বার্থে?- রেলপথ মন্ত্রীর জমি ‘সম্প্রদান

জনস্বার্থের প্রকল্প থমকে যায়, তবু রেলের জমি অধরাই থাকে। কিন্তু হয় যদি তা ব্যবসায়িক স্বার্থ, তাহলে ঘটনাটি সম্প্রদান কারক হয়ে যায়; অর্থাৎ হয় ‘বিনা স্বার্থে দান’। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা মূল্যের জমি রেলপথ মন্ত্রী তাঁর পরিচিত লোককে দিতে যাচ্ছেন এবং আয়োজন চূড়ান্ত।
সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে রেলওয়ের তিন একর জমি সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এই জমির বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে প্রতীকী মূল্যে। রেলপথ মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এই জমি এক থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে যেকোনো মূল্যে দিতে চান বলে শুক্রবারের প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজটি পরিচালনা করে এম এ রশিদ ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ মন্ত্রীর ‘এলাকার লোক’ এবং বন্ধু বলে পরিচিত। সেই সূত্রে রেলওয়ের কেন্দ্রীয় ভূ-বরাদ্দ কমিটি এই জমি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার জন্য সুপারিশও করেছে। সাউথ পয়েন্ট ঢাকার অভিজাত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। বাজারমূল্যে জমি কেনার সামর্থ্য তাদের আছে। তার পরও রেলের জমি পাওয়ার তদবির।
রেলের জমি কি পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা, চাইলেই অকাতরে দান করা যায়? ঢাকার মতো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটি নগরে জমির অভাবে অনেক সরকারি ও জনস্বার্থমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন আটকে থাকে। সম্প্রতি খিলগাঁও উড়ালসড়ক সম্প্রসারণে রেলের জমি চাওয়া হলেও রেল মন্ত্রণালয় তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রীকে রেলের জমি হেফাজত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিবিশেষকে নামমাত্র মূল্যে দান করার জন্য নয়। জমি দেওয়ার এই প্রক্রিয়া এখনই বন্ধ করা হোক। সেই সঙ্গে ব্যক্তিবিশেষকে রেলের জমি দেওয়ার এই আয়োজনের পেছনে কী রহস্য আছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সাবেক রেলপথ মন্ত্রী রেলের কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে নিজেই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে দপ্তর হারিয়েছেন। নতুন রেলপথ মন্ত্রী কোন বিড়াল ধরতে চাইছেন, সেটাই বড় প্রশ্ন।

No comments

Powered by Blogger.