বাংলানিউজের খবরের পর- টেকনাফ থেকে মানবপাচারকারী দালাল আটক by রহমান মাসুদ ও ইলিয়াস সরকার

বাংলানিউজের খবরের পর টেকনাফ সি বিচ থেকে মানবপাচারকারী দালাল আইউব আলীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যার পর পুলিশের একটি বিশেষ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আইউবকে আটক করে।
এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরহাদ বাংলানিউজকে জানান, আইউবকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে তার মাধ্যমে অন্য দালালসহ পুরো চক্রটিকে ধরে ফেলা সম্ভব হবে।

বাংলানিউজের একটি অনুসন্ধানি টিম বেশ কয়েকদিন টেকনাফ, কক্সবাজার এলাকায় অবস্থান করে ১২ শ’ সদস্যের একটি দলকে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচার করার তথ্য জানতে পারে। শুক্রবার রাতেই এই মানুষগুলোকে পাচার করা হবে বলে নিশ্চিত খবর বাংলানিউজের প্রকাশিত হয়। এতে সজাগ হয় কক্সবাজারের পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের অন্যরাও। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রশাসনের চোখ এডিয়েই শুক্রবার গভীর রাতে ওই সক্রিয় দালাল চক্রটি ১২শ’ মানুষ সমুদ্রপথে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

এ নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সঙ্গে। তিনিও মানবপাচারের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন। বাবুল আক্তার কক্সবাজার থেকে মানবপাচার চক্রের দালালদের আটক করার অভিযানে সার্বিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাংলানিউজে শুক্রবার রাতে খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই পুলিশকে পুরো এলাকায় সতর্ক করে দেওয়া হয়। যেসব পয়েন্ট বা ঘাট থেকে মানুষগুলোকে সংগ্রহ করে দালালরা জাহাজে তোলার ব্যবস্থা নিয়েছিলো সেসব পয়েন্টেও বসানো হয়েছিলো কড়া নজরদারি। কিন্তু টেকনাফ বিচটি অনেক বড় হওয়ায় পুরো বিচে নজর রাখা অসম্ভব ছিলো। বাবুল আক্তারের মতে সে সুযোগটি ব্যবহার করেই দালালরা কৌশলে মানবপাচার করে দিয়েছে।

তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনকে পাচারকৃত মানুষগুলোর মাথাপিছু ধার্য্য করা অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করেই তাদের জাহাজে তুলেছে দালালরা।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানান বাবুল আক্তার।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা চায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শুক্রবার দিনগত রাত তিনটায় মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয় ১২০০ জন। এর আগে টেকনাফের বিভিন্ন ঘাট থেকে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে সেন্টমার্টিনের উপকূলে থাকা বার্মিজ কাঠের জাহাজে ওঠেন তারা।

রাতে টেকনাফের খুড়েরমুখ ঘাট থেকে ৬০ জন, মুন্ডারিল থেকে ৪৫ জন ও জয়নালের ঘাট থেকে ৫৫ জনসহ প্রায় ২৫০ জন মাছধরার ছোট ট্রলারে করে ছোট ছোট উপদলে ভাগ হয়ে সেন্টমার্টিন উপকূলে অপেক্ষারত জাহাজে ওঠে।

এছাড়া আরো ৬০০ জন আসেন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, মিরসরাই, শিকলবাহাসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে। এরপর রাত ৩টার দিকে মালয়েশিয়ার পথে গভীর সাগরে দুইদিন ধরে অপেক্ষামাণ বাকি ৪০০ জনকে নিয়ে রওনা হয় জাহাজটি।

সেন্টমার্টিনের জাহাজ থেকে আব্দুর রহমান নামের এক দালাল জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করেই লোক পাঠানো হয়েছে। এ কাজে বরাবরের মতো সহায়তা করেছেন টেকনাফের এক সংবাদকর্মী।

অন্য এক দালাল জানান, যত জন লোক যাওয়ার কথা ছিল শেষ পর্যন্ত যোগাড় হয়েছে তারও বেশি।

সূত্র জানায়, আট দিনে থাইল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দিতে দালালরা আদায় করেছে ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেখানে অপেক্ষারত থাই দালাল নেবে আরো এক লাখ ১৫ হাজার থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

সব ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনে মালয়েশিয়া পৌছে যাবে বিপদপথের এই যাত্রীরা। নয়ত ঘটবে সাগরেই সলিল সমাধি।

অঘটন ঘটলে তার দায় আমাদের নেই এমনই কথা রয়েছে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সঙ্গে, জানালেন দালালদের একজন।

No comments

Powered by Blogger.