সুনামগঞ্জে ‘জুবিলিয়ান’ উৎসব শুরু

সুনামগঞ্জ শহরে গতকাল শুক্রবারের কুয়াশামোড়া সকালটা একটু অন্য রকম ছিল। শহরজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। নানা রঙের পতাকা ও ফেস্টুনে সাজানো। ঐহিত্যবাহী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ১২৫ বছর পূর্তি উৎসবের উদ্বোধনের সময় ছিল সকাল ১০টা।
সকাল আটটা থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হতে থাকেন জুবিলিয়ানেরা। একসময় পুরো মাঠ মুখর হয়ে ওঠে নবীন-প্রবীণ জুবিলিয়ানদের পদচারণে। চিরাচরিত নিয়মে বিদ্যালয় শুরুর ঘণ্টা বেজে ওঠে। সারিবদ্ধভাবে জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে যান হাজারো শিক্ষার্থী।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য উৎসবের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক চৌধুরী। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি সঞ্চৃতিফলকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী।
উদ্বোধন শেষে নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার পাঠ দেন বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও উৎসব উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক মুহামঞ্চদ আবদুর রহিম। মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় উদ্বোধনীপর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উদ্যাপন পরিষদের সদস্যসচিব মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন নারী শিক্ষার্থী চিকিৎসক মনসুরা খাতুন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এতে নেচে-গেয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন জুবিলিয়ানেরা।
ফারুক চৌধুরী বক্তব্য দিতে গিয়ে অতীত দিনের কথা তুলে আনেন। বলেন, ‘১৯৪১ সালে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। সেই মুধর সঞ্চৃতি এখনো আমাকে আপ্লুত করে। সঞ্চৃতির টানে, নাড়ির টানে আজ এত বছর পর আবার এসেছি। মনে হচ্ছে, আবার যদি সেই দিনে ফেরা যেত।’
বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘বাবা শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সুবাদে জুবিলিতে পড়ার সুযোগ হয়েছে। এই বিদ্যালয়, এই সুনামগঞ্জ শহর আমার হূদয়ে গেঁথে আছে। যত দিন বাঁচব, তত দিন এই বিদ্যালয় ও শহর আমার অন্তরে থাকবে।’ বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও গৌরব ধরে রাখার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
শোভাযাত্রা শেষে বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনাপর্বে বক্তব্য দেন বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক এনামুল কবির, পৌর মেয়র আয়ুব বখত জগলুল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ার্যমান দেওয়ান জয়নুল জাকেরিন প্রমুখ।
প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ফরিদা পারভীন, বিশ্বজিৎ রায়, মরিয়ম বেগম সুরমাসহ স্থানীয় শিল্পীরা।
আজ শনিবার দিনব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতা ও রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর উৎসব শেষ হবে। আজ সংগীত পরিবেশ করবেন সাবিনা ইয়াসমীন, সেলিম চৌধুরী, ফকির সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.