কুয়েত থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকরা ফিরছেন খালি হাতেঃ সরকারের কি কিছুই করার নেই?

২০০৬ সালের পর থেকে কুয়েতে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য এক অশুভ সংবাদ। আগে প্রতিবছর গড়ে ২৫ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ নিয়ে কুয়েত যেত। কিন্তু ২০০৭ সালে সে সংখ্যা নেমে আসে মাত্র ৪ হাজার ২১২ জনে।
পরবর্তী বছরগুলোতে যা ঘটেছে, তাতে অবশ্য ২০০৭ সালের সংখ্যাকে ‘মাত্র’ বলার উপায় নেই। ২০০৮ সালে কুয়েতে বাংলাদেশী শ্রমিক গেছেন ৩১৯ জন। ২০০৯ সালে গেছেন ১০ জন এবং চলতি বছরের তিন মাসে ১১ জন। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বর্তমান বছরে কুয়েতে আমাদের জনশক্তি রফতানি ১০০ অতিক্রম করার কোনোই সম্ভাবনা নেই। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো কুয়েতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। ফলে সেদেশে অবস্থানরত ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক এখন দিন কাটাচ্ছে চরম আতঙ্কের মধ্যে। আকামা (কাজের নিয়োগপত্র) না থাকার অজুহাতে শ্রমিকদের ধরে নিয়ে জেলহাজতে ঢোকানো হচ্ছে। সেখানে ১৫/২০ দিন আটক রাখার পর এক কাপড়ে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বোঝা যায়, সেখানকার পুলিশ ও প্রশাসন বাংলাদেশীদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত। ২০০৬ সালে কুয়েতে অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশী খুন, ধর্ষণসহ একাধিক গুরুতর অপরাধ ঘটানোর কারণে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেনা-সমর্থিত জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাপারটা উপেক্ষা করায় এর সঙ্গে আরও নানান অনুঘটক যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুয়েত সফরের প্রেক্ষাপটে আশা করা হয়েছিল অবস্থা স্বাভাবিক হবে; আবার কুয়েতে বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানির সুযোগ আসবে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ যে সফল হয়নি, তার প্রমাণ এখন হাতে-কলমে পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কুয়েতে জনশক্তি রফতানি করে আসছে সত্তর দশকের শেষভাগ থেকে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশী শ্রমিকরা দেশটিতে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছিল। হঠাত্ পরপর ঘটে যাওয়া কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের মুখে কালি লেপে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশীরা যে মূলত শান্তিপ্রিয়, সুশৃঙ্খল ও নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষ এবং গুটিকয়েক দুর্বৃত্তের জঘন্য অপরাধ সত্ত্বেও সাধারণভাবে বাংলাদেশী শ্রমিকদের যে গ্রহণযোগ্যতা থাকা উচিত, এ কথা কুয়েতিদের বোঝাতে আমরা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হলাম কেন—সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। দু’দশক আগে প্রথম ইরাক যুদ্ধের সময় কুয়েতিদের চরম দুর্দিনে বাংলাদেশের শ্রমিকরা যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, দেশটির পুনর্নির্মাণ কর্মকাণ্ডে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল—এ তথ্যগুলো গুছিয়ে তুলে ধরতে পারলে কি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসত না? এ কথা ঠিক যে, প্রতিদ্বন্দ্বী রফতানিকারক দেশগুলো কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু এসবের মোকাবিলা করতে না পারা তো আমাদেরই ব্যর্থতা! আমরা চাই, কুয়েতসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধরে রাখা ও সম্প্রসারিত করার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হোক। অন্যথায় এক্ষেত্রে ব্যর্থতা জাতীয় অর্থনীতিকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করবে, যার জের ধরে সামাজিক অস্থিরতা অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.