ঢাকায় থাই প্রধানমন্ত্রী-সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বাংলাদেশ

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় এসেছেন। প্রায় আট বছর পর থাই সরকারপ্রধান পর্যায়ের এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকায় বসছে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিক বৈঠক। সেখানে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য জোরদারে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা এবং আরো বেশি বিনিয়োগ চাইবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। এদিকে আজ শনিবার বৈঠকের পর শেখ হাসিনা ও ইংলাক সিনাওয়াত্রার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক (ফরেন অফিস লেভেল কনসালটেশন, সংক্ষেপে এফওসি) অনুষ্ঠান বিষয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে।
আজকের বৈঠকে বাংলাদেশ কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গতকাল শুক্রবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ইস্যুই প্রাধান্য পাবে। শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করার পাশাপাশি থাইল্যান্ডের বাজারে নির্দিষ্ট কয়েকটি বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাইবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল দেশে অনুকূল পরিবেশের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে থাইল্যান্ডের কাছে বিনিয়োগ প্রত্যাশার কথা জানাবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের উন্নতমানের কথা তুলে ধরে থাইল্যান্ডের বাজারে তা রপ্তানির বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতেও থাই সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ।
তিনি আরো জানান, কৃষি খাতে এমওইউ স্বাক্ষরের ফলে এ খাতে সহযোগিতার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠকের জন্য যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হচ্ছে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্বাক্ষরের ফলে আগামীতে প্রতিবছর দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আজকের বৈঠকে দুই পক্ষ আগামীতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে নিজেদের প্রার্থিতায় পারস্পরিক সমর্থন চাইবে। গত বছর থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যার সময় জরুরি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ ওই দেশটিকে ১০ লাখ ডলার দিয়েছিল। আজকের বৈঠকে এর জন্য থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি উভয় দেশ চার দশকের কূটনৈতিক সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করবে।
ঢাকায় উষ্ণ অভ্যর্থনা
গত বছর আগস্টে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইংলাক সিনাওয়াত্রার এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন পাঁচজন মন্ত্রী, শীর্ষ পর্যায়ের ত্রিশ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল। গতকাল শুক্রবার বিকেলে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় এসে পৌঁছলে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এরপর বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সোনারগাঁও হোটেলে। সন্ধ্যায় হোটেলে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর তিনি রেডিসন হোটেলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন। রাতে তিনি আবার ফিরে আসেন সোনারগাঁও হোটেলে।
সফরসূচি অনুযায়ী আজ শনিবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি সম্মান জানাবেন। এরপর তিনি ঢাকায় ফিরে ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর থেকে ইংলাক সিনাওয়াত্রা যাবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে একান্ত বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা ও ইংলাক সিনাওয়াত্রা। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রী এমওইউ স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ত্যাগের আগে ইংলাক সিনাওয়াত্রা পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আজ শনিবার দুপুরে থাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে সোনারগাঁও হোটেলে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বিকেলে ঢাকা ছাড়ার আগে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সিনাওয়াত্রার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। ঢাকা ছাড়ার সময় বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাবেন।

No comments

Powered by Blogger.