শীতে কাহিল ছিটমহলের মানুষ

তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের ১২টি ভারতীয় ছিটমহলের ২০ হাজার দরিদ্র মানুষ। প্রতিবছর পঞ্চগড়ের শীতার্তদের মধ্যে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। কিন্তু ছিটমহলের লোকজন কোনো শীতবস্ত্র পায় না।
সদর উপজেলার গারাতি ছিটমহলের জফিরন বেওয়া (৭৫) আক্ষেপ করে বলেন, ‘কেন যে হামার ছিটমহলত জন্ম হইল, হামেরা কুন সাহায্য পাই না, ঠান্ডায় মরে যাছি।’
সরেজমিনে সদর, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ছিটমহলে দেখা যায়, গরম কাপড়ের অভাবে এসব ছিটমহলের অধিকাংশ মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকে ছেঁড়া কাপড় গায়ে জড়িয়ে এবং কেউ কেউ খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ছিটমহলের বাসিন্দারা জানায়, সরকার ও হূদয়বান ব্যক্তিরা তাঁদের শীতবস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
গারাতি ছিটমহলের স্কুলছাত্র মনোয়ার জানায়, তার বাবা গরিব। এ কারণে তিনি তাকে এবার শীতবস্ত্র কিনে দিতে পারেননি। দুই বছর আগে কেনা সোয়েটার জোড়াতালি দিয়ে সে এ বছরও গায়ে দিচ্ছে। একই ছিটমহলের আহাম্মদ আলী জানান, তাঁর পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচজন। এ বছর ধানের দাম কম হওয়ায় তিনি তাদের শীতবস্ত্র কিনে দিতে পারেননি।
শালবাড়ি ছিটমহলের স্কুলছাত্রী মনোয়ারা বেগম বলে, ‘আমরা ছিটমহলের নাগরিক। তাই বাংলাদেশ সরকার আমাদের কোনো সাহায্য করে না। বাংলাদেশের সহপাঠীরা নতুন নতুন গরম কাপড় পরে স্কুলে এলেও আমার ভাগ্যে একটিও জোটে না।’
গারাতি ছিটমহলের চেয়ারম্যান মো. মফিদার রহমান জানান, প্রতিবছর ছিটমহলের শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে মারা যাচ্ছেন। দেবীগঞ্জ উপজেলার ভেতরে অবস্থিত ভারতীয় শালবাড়ি ছিটমহলের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, পঞ্চগড় জেলায় ১২টি ভারতীয় ছিটমহল আছে। এসব ছিটমহলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাস করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র। তাদের শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই।
সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘ছিটমহলের বাসিন্দারা তীব্র শীতে অমানবিক জীবন যাপন করছে। আইনি জটিলতার কারণে তাদের জন্য আমরা কিছুই করতে পারছি না। মানবিক কারণে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে ছিটমহলের শীতার্তদের জন্য কিছু করা দরকার।’

No comments

Powered by Blogger.