চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট-ভাবতে হবে গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এখন দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। বহুদিনের পুরনো এ সংকট সে অঞ্চলে এতকাল ছিল কলকারখানায়, এখন রান্নার চুলায়ও সবসময় গ্যাস মিলছে না। কারণ, দুপুর পর্যন্ত কলকারখানায় গ্যাসের ওপর চাপ থাকে। ফলে আবাসিক লাইনে টান পড়ে।
এর ফলে নগরবাসীর যে দুর্ভোগ বাড়ছে, সে তথ্যও গতকাল বুধবার সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় মুদ্রিত প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিতভাবে জানা গেছে। দীর্ঘদিন গ্যাসের চুলায় স্বস্তিতে রান্নায় অভ্যস্ত যারা, তাদের জন্য আকস্মিক সৃষ্ট এই সংকট যে কতটা দুর্ভোগের, তা ভুক্তভোগীরাই অনুধাবন করতে পারেন। অনেকে সকালের নাশতা তৈরি করতে না পেরে কলা-রুটি খেয়ে অফিসে যাচ্ছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। গ্যাস সংকটে পড়ে অনেকে কেরোসিনের স্টোভ এবং মাটির চুলাও ব্যবহার করছেন। সৃষ্ট সংকটের কথা স্বীকার করেছেন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় রান্নার চুলায় গ্যাস যাচ্ছে না। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শুধু নয়, গ্যাস সংকট দেখা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়ও। গ্যাসের অভাবে বহুতল ভবনগুলোর অসংখ্য বাসিন্দা ভোগান্তির শিকার। নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু গ্যাস সংযোগ মিলছে না_ এমন বহুতল ভবনের সংখ্যাও অনেক। গ্যাস আছে এমন বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সঙ্গে গ্যাস সংযোগ নেই_ এমন বাড়ির ভাড়ায়ও যথেষ্ট ব্যবধান এখন। অনেক নতুন ফ্ল্যাট ভাড়াও হচ্ছে না গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায়। 'চট্টগ্রামে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না' শিরোনামে বুধবার প্রকাশিত খবরের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি মানে উৎপাদন-উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে বিপর্যয়। অন্যান্য কলকারখানায়ও নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন মার খাচ্ছে। দেশের শিল্পকারখানায় যদি গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হয়, তা যে জাতীয় অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক, সে কথা সবাই জানেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের প্রকৃতি প্রদত্ত এই গ্যাসসম্পদ অত্যন্ত সীমিত জেনেও আমরা তার সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করিনি। বহু বছর আমাদের নীতিনির্ধারকরা ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবেননি, বিদ্যুৎ উৎপাদন আর কলকারখানার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে গ্যাসের সরবরাহ যে রান্নার চেয়ে অনেক জরুরি, তাও বিবেচনা করেননি। ফলে কোটি কোটি ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ধ্বংস করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে রান্নার চুলায়। পৃথিবীর কোথাও ঘরের চুলায়, প্রাইভেট গাড়িতে এমন বেহিসাবি গ্যাসের অপচয় নেই। আমরা মনে করি, অবিলম্বে পাইপলাইনে রান্নার জ্বালানি গ্যাস সর্বত্র বন্ধ করে দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার চালু করা উচিত। গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারে জাতীয় গ্যাস নীতিমালাও প্রণয়ন জরুরি। গ্যাস আমরা কীভাবে ব্যবহার করব_ এখনই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.