ওবামার দিকে তাকিয়ে বিশ্ব by শামসুন নাহার

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন বারাক ওবামা। তাঁর প্রথম মেয়াদের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে বেশ আগেই। সমানতালে চলছে দ্বিতীয় মেয়াদে ওবামা প্রশাসন নতুন কী করবে সেই জল্পনা-কল্পনা। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের শাসনযন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ।


আসুন তবে দেখে নেওয়া যাক ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে কী পরিবর্তন এনেছেন তিনি আর পরবর্তী মেয়াদেই বা তাঁর কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করছে বিশ্ব।
দীর্ঘদিন ধরে একনায়কতন্ত্র কায়েম ছিল এমন দেশগুলোতে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। কাকতালীয়ভাবে অথবা প্রাকৃতিক নিয়মে একনায়কদের মৃত্যু, গণ-অভ্যুত্থান কিংবা বিশ্ব রাজনীতির প্রভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসা এসব পরিবর্তনকে ওবামা প্রশাসন কিভাবে কাজে লাগাবে সেটা ভাববার মতো বিষয় বৈকি।
এসবের বিপরীতে খোদ যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য হারে বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং সেই কারণে সৃষ্ট সামাজিক অস্থিরতা, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অবস্থান থেকে সপ্তমে নেমে যাওয়া, মধ্যপ্রাচ্য জটিলতায় শরণার্থীর হার বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাজনিত সমস্যাও রয়েছে।
ইতিবাচক ও নেতিবাচক ইস্যুগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ওবামার বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কী হবে সেদিকে তাকিয়ে আছেন বিশ্ব নেতারা। তবে বারাক ওবামা আবার নির্বাচিত হওয়ায় এরই মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)- এমনটাই ধারণা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের। কারণ গত চার বছরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মতো স্পর্শকাতর ইস্যুসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একমত হয়ে কাজ করেছে ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পুনর্নির্বাচিত ওবামা সমস্যাটি নিরসনে ইরানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা অব্যাহত রাখবেন বলেই আশা করছেন তাঁরা।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ওবামার জয়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে চীন। দুই দেশের সম্পর্ক তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় মন্তব্য করে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও বলেছেন, 'দুই দেশের এই সুস্থির সম্পর্ক প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাসহ সারা বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।'
তবে দ্বিতীয়বারের মতো ওবামার জয়ে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ও ইসরায়েল। পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিন সেনাদের ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা, ড্রোন হামলা ইত্যাদি নিয়ে দেশ দুটির সম্পর্কে টানাপড়েন রয়েছে। আর ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দিয়েছে।
সব মিলিয়ে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং সেখানকার নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ মধ্যপ্রাচ্য শান্তি ইস্যুতে ওবামার অবস্থান কী হবে এবং সেই সঙ্গে অবশিষ্ট বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র তার পররাষ্ট্রনীতিতে কি পরিবর্তন আনবে, নাকি আদৌ কোনো পরিবর্তন হবে না- এসবই হয়ে উঠেছে এই মুহূর্তের 'টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড'। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.