কালুরঘাট সেতু- ফেরির কষ্ট আরও এক মাস by মিঠুন চৌধুরী

সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ আছে কালুরঘাট রেল সেতু। এ কারণে এখন যানবাহন পারাপার চলছে ফেরিতে। সেতু বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন বোয়ালখালীর বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যাতায়াতকারীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেরামতকাজ শেষ হতে আরও এক মাস সময় লাগতে পারে।


গত মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, কালুরঘাট সেতুর দুই পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। নিয়মিত বিরতিতে যাত্রী পারাপার করছে তিনটি ফেরি। পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায়ও নদী পার হচ্ছেন।
বোয়ালখালীর উপজেলার গোমদণ্ডী এলাকার রুবেল দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন বাড়ি থেকে শহরে যাতায়াত করি। রাতে শহর থেকে ফেরার সময় ফেরিঘাটে গাড়ি থেকে নেমে যেতে হয়। নদী পার হয়ে আবার অন্য গাড়ি ধরতে হয়। এতে সময় লাগে বেশি। তা ছাড়া জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে ফেরি চলে না। তখন নৌকা দিয়ে পার হতে হয়।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী নদীর ওপর ১৯৩০ সালে কালুরঘাট সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এরপর ১৯৮৬, ১৯৯৭ ও সর্বশেষ ২০০৪ সালে তিন দফায় সংস্কার করা হয় কালুরঘাট সেতুর। তারপর দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের সংস্কার না হওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূণ হয়ে পড়ে। ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও।
গত ১ সেপ্টেম্বর মেরামতকাজ শুরু হলে সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৫ মার্চ ও ২ মে তিনবার সেতুটি মেরামতের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগ। কিন্তু ফেরি চালু করতে না পারায় তখন সংস্কারকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
এবার মোট ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারি লাইনে কালুরঘাট সেতুর কয়েকটি স্প্যানের এলাইনমেন্ট, গেজ ও লেভেল মেরামতসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হচ্ছে। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য সেতুর নিচে কর্ণফুলী নদীতে তিনটি ফেরি চালু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
এই পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী কামাল উদ্দিন জানান, জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে হাঁটুসমান পানি উঠত পাড়ে। কিছুদিন একটি ফেরিও নষ্ট ছিল। তখন অনেক কষ্টে নদী পার হতে হতো। এখন শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় পানি কমেছে। কিন্তু এত সময় নিয়ে মেরামত চলায় রোগী, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য বোয়ালখালীর বাইরে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুটি আর কত বছর মেরামত করে চালানো হবে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বলেন, ‘দুই পাড়ের জেটিঘাট ও বেইলি সেতু কয়েকবার উঁচু করা হয়েছে। এখন তিনটি ফেরিই সচল আছে। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম কোরবানির ঈদের আগেই সংস্কারকাজ শেষ করতে। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি।’
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, ‘মাঝখানে বর্ষার কারণে কিছুদিন পুরোদমে কাজ করা যায়নি। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। আশা করি এক মাসের মধ্যেই পুরো সংস্কার শেষ হবে। নভেম্বরের শেষ দিকে সেতু খুলে দিলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে।’

No comments

Powered by Blogger.