বাঘহত্যা-নির্মমতার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হোক

আবারও পিটিয়ে একটি বাঘ হত্যা করেছে আতঙ্কিত গ্রামবাসী। খুলনার দাকোপ উপজেলার পশ্চিম ঢাংমারি এলাকার গ্রামে একটি বয়স্ক পুরুষ বাঘ ঢুকে এক গ্রামবাসীকে আহত করলে আতঙ্কিত ও ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়লে গ্রামবাসী আতঙ্কিত হবেই, তারা ভয়ঙ্কর প্রাণীটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টাও করবে।


লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়লে নিয়মানুযায়ী তৎক্ষণাৎ বন বিভাগের স্থানীয় কার্যালয়ে খবর পেঁৗছানোর কথা। মোবাইল ফোনের বহুল বিস্তারের প্রেক্ষাপটে এ খবর পেঁৗছানো কঠিন নয় আজকাল। বন বিভাগ অবগত হলে টাইগার রেসপন্স টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চেতনানাশক দিয়ে বাঘটিকে অচেতন করে আবার গভীর বনে ফিরিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু আর সব ব্যাপারের মতো বাঘ রক্ষার ক্ষেত্রেও সীমাহীন শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। ফলে একের পর এক বাঘ হত্যার খবর মিলছে। সুন্দরবনের মূল্যবান এ প্রাকৃতিক সম্পদ এখন তীব্র হুমকির মুখে। আমরা মনে করি, বাঘ রক্ষার প্রয়োজনে বন বিভাগের তৎপরতা বাড়ানো উচিত। তাদের দ্রুত ও সময়োপযোগী তৎপরতাই পারে বাঘের বসবাস নিরাপদ করতে। তবে শুধু বন বিভাগই নয়, স্থানীয় জনসাধারণকেও সজাগ হতে হবে। হত্যা না করে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের খবর দিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দৃশ্যমানভাবে মনে হয়, বাঘগুলো লোকালয়ে অনুপ্রবেশ করছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ক্রমে বাঘের জায়গা দখল করে চলেছে। বন সংকুচিত করে বাঘের বিচরণ এলাকা কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। ফলে বাঘ বাধ্য হয়েই বন ছেড়ে মানুষের বসতিতে এসে পড়ছে। ভয়ঙ্কর প্রাণী হলেও বাঘেরও অধিকার আছে বাঁচার। আর এই প্রাণীটি মানুষের সহযোগিতা ছাড়া বাঁচতে পারবে না। আমরা আশা করি, এমন বোধ স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হবে। তবে বন বিভাগ যদি তৎপর না হয়, যথাসময়ে যথাবিহিত কাজ না করে, তবে মানুষের সচেতনতা কোনো কাজে আসবে না। তাই এ ক্ষেত্রে কর্তব্যে অবহেলা বা শৈথিল্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাঘ হত্যার এই নির্মমতা বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

No comments

Powered by Blogger.