বিশ্বময় শান্তি ও উন্নয়ন সাধিত হোক- অভিনন্দন, বারাক ওবামা

মঙ্গলবারের নির্বাচনে বারাক ওবামা দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁর এ বিজয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর প্রথম বিজয়ের সহজ ও বিপুল যদিও হয়নি, তবু এটা আমেরিকার ও পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


বুশ আমলের অর্থনৈতিক ও সামরিক ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে বারাক ওবামা ২০০৮ সালে আমেরিকার ভোটারদের মনে যে আশার সঞ্চার করতে পেরেছিলেন, সেটাই তাঁকে বিপুল বিজয় এনে দিয়েছিল, আমেরিকার ইতিহাসে সর্বপ্রথম একজন কালো মানুষকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়েছিল সে দেশের জনগণ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা চার বছর দায়িত্ব পালনের পর আবার যখন নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন, তত দিনে তাঁকে কেন্দ্র করে আমেরিকান জনগণের আশা-উদ্দীপনা অনেকটাই ম্লান হয়ে এসেছিল। কেননা, তাঁর চার বছরের শাসনকালে আমেরিকার অর্থনৈতিক দুর্দশার খুব বেশি উন্নতি ঘটেনি, কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। মোদ্দাকথা, যেসব আশায় তিনি আমেরিকার জনগণকে উদ্দীপিত করেছিলেন, তাঁর প্রথম মেয়াদে সেগুলো পূরণ হয়েছে সামান্যই। তাই এবারের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাঁর জন্য ছিল এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী মিট রমনি সরকারবিরোধী কনজারভেটিভ এজেন্ডার ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওবামার বিজয়ের পথ সুগম হয়েছে।
ওবামার এ বিজয়ের অর্থ তাঁর ওপর আমেরিকান ভোটারদের আশা পুরোপুরি নিঃশেষিত হয়নি। বরং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্য খাতের সংস্কার সাধন, কর বৃদ্ধি, বাজেট-ঘাটতি কমিয়ে আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য সৃষ্টিসহ বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচির যে অঙ্গীকার ওবামা ব্যক্ত করেছেন, সেসবই ভোটারদের মনে আস্থা ও ভরসা জাগিয়েছে। এ ছাড়া অভিবাসন, গর্ভপাত, সমলিঙ্গ বিবাহ বিষয়ে তাঁর অপেক্ষাকৃত উদারনীতির প্রতিও সমর্থন ব্যক্ত হয়েছে এই নির্বাচনী ফলাফলে। বহুবিচিত্র ভাষা, ধর্ম, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের মানুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা আমেরিকান সমাজ ও রাষ্ট্র এই নির্বাচনে তার উদার গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী আদর্শ ধরে রেখেছে, প্রত্যাখ্যান করেছে শ্বেতাঙ্গ জাত্যভিমান ও কট্টর খ্রিষ্টীয় রক্ষণশীলতাকে। আমেরিকান গণতন্ত্রকে ধনিকগোষ্ঠীর একচ্ছত্র হাতিয়ার বানানোর পরিকল্পনাকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন সে দেশের ভোটাররা।
এই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বড় ইস্যু হিসেবে কাজ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনসংক্রান্ত নানা পদক্ষেপ আঞ্চলিক ভূরাজনীতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে চলেছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে প্রত্যাশা ছিল মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানে রক্তপাত বন্ধ করে তাঁর প্রশাসন শান্তি স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এ ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্য এ পর্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক নয়। কথা রয়েছে, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। অতঃপর এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা টেকসই হবে কি না, তা দেখার বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যতম বড় উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে পাশে পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

No comments

Powered by Blogger.