সাক্ষাৎকার-অর্থনীতিকে টেনে তুলেছেন ওবামা by সি এম শফি সামি

'কিছু কিছু প্রশ্ন আছে- জবাব দিতে নেই। সময় এলে আপনাআপনিই জবাব সামনে হাজির হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন- ওবামা, না রমনি? এই প্রশ্নের জবাব এখন সবার জানা। হোয়াইট হাউস আবারও চার বছরের জন্য বারাক ওবামার দখলেই থাকছে।'


যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এ নিয়ে কালের কণ্ঠকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট কূটনীতিক সি এম শফি সামি এমন মন্তব্য করেছেন।
'চারদিকেই ওবামার জয়ধ্বনি। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন' প্রশ্নের উত্তরে সময় নষ্ট না করেই শফি সামি বলেন, 'এই বিজয় প্রত্যাশিতই ছিল। আগে থেকেই পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল। বিষয়টি নির্বাচনের দু-এক দিন আগেই বোঝা যাচ্ছিল। ৮-৯টি অঙ্গরাজ্যে দোদুল্যমান অবস্থা ছিল। এর পরও ওবামার দিকে পাল্লা ভারী থাকার বিষয়টি অনেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন।'
কূটনীতিক শফি সামি বলেন, '২০০৮ সালে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন আশার আলো দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তিনি পুরো আলো হয়তো ছড়াতে পারেননি; তবে আশার আলো ছড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা তিনি করেছেন। জর্জ বুশের যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্ষয়ের মুখে পড়ে গিয়েছিল। ওবামা তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে তুলেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো তিনি পূর্ণ সাফল্য পাননি। এটা ছিল তাঁর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। তিনি যে কর্মসূচি শুরু করেছেন, এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাঁকে চেয়েছেন আবারও। অনেকে মনে করেছেন রমনি নির্বাচিত হলে ওবামার শুরু করা এই অন্য-যুদ্ধ ব্যাহত হতো। ব্যাহত হতো অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাও।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ওবামার অবদানের বিষয়টি উল্লেখ করে শফি সামি বলেন, 'ওবামা উল্লেখ করার মতো সাফল্য দেখিয়েছিলেন হেলথ কেয়ারের বিষয়ে। মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করতে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। পররাষ্ট্রনীতিতে যুদ্ধ থেকে সরে আসার বৈশিষ্ট্য আমরা লক্ষ্য করেছি। আসলে আগ্রাসী মনোভাব যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনে এমন ফলের পেছনে এ বিষয়ও কাজ করেছে।'
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সমর্থন ওবামার প্রতি কতটা ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে শফি সামি বলেন, 'ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাঁরা ওবামার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর বড় কারণ হলো, অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে ওবামার উদার নীতি।'
ওবামার এই বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে এই কূটনীতিক বলেন, এই সম্পর্ক অক্ষুণ্ন থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি একটা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এবার নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির বদলে অন্য দল বিজয়ী হলে পররাষ্ট্রনীতি কী হবে- এ নিয়ে হয়তো প্রশ্ন তোলা যেত।
অতীত টেনে শফি সামি বলেন, 'ঐতিহাসিকভাবে আমরা দেখি ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় থাকলে তাঁরা উদার আচরণ করে থাকেন; বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পর সম্পর্ক ভালো থাকে। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন যে সম্পর্ক আছে বাংলাদেশের, তা বজায় থাকবে বলেই আমি মনে করি। পররাষ্ট্রনীতিতে বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন না আনলে, ওবামার অনুসরণ করা নীতি ভবিয্যতে অব্যাহত থাকলে তা বাংলাদেশের জন্য শুভই হবে। এখানে বলে রাখি, বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পর সম্পর্ক অনেক উন্নত হয়েছিল। ক্লিনটনও ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।'
ওবামার এই বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবস্থান কেমন হবে জানতে চাইলে শফি সামি বলেন, বর্তমানে অনুসৃত নীতিতে এ ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন হবে এমনটি মনে করা যায় না।

No comments

Powered by Blogger.