পরিবর্তন প্রয়োজন রিপাবলিকানদের

টালমাটাল অর্থনীতি আর চড়া বেকারত্বের হার নিয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন বারাক ওবামা। গত চার বছরে কংগ্রেসের সমর্থনও খুব একটা পাননি। এমনই সমস্যাজর্জরিত কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেন মিট রমনি। এরই মধ্যে বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে হার নিয়ে। গলদ ছিল কোথায়? তাঁকে প্রার্থী করায়, তাঁর প্রচারে, না দল হিসেবে সময়ের সঙ্গে আধুনিক হয়ে উঠতে পারেনি রক্ষণশীল বলে পরিচিত রিপাবলিকান পার্টি? শেষ মতটির দিকেই আঙুল উঠেছে সবচেয়ে বেশি।


বলা হচ্ছে, রিপাবলিকান দলের প্রতি জনসমর্থন কমছে। নানান তথ্য-উপাত্তও এ মতের পক্ষেই রায় দেয়। গত ছয়টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্যে জনগণের ভোটের বিবেচনায় পাঁচটিতেই হেরেছে রিপাবলিকানরা। কাজেই, সময় হয়েছে আত্মপর্যালোচনার। দলটিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা সরকারবিরোধী গতানুগতিক ভূমিকাতেই থাকবে, না গণমত প্রবলভাবে কেন তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তা অনুসন্ধানে মনোযোগী হবে। দলের দীর্ঘ দিনের পরামর্শক মাইক মারফি বলেন, 'এটা একধরনের লড়াই। দলের কট্টর রক্ষণশীলদের বিশ্বাস, বড় ধরনের পরির্বতন ছাড়াই রক্ষণশীল নীতি-আদর্শ নিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব। কাজেই হিসপানিক, কৃষ্ণাঙ্গ, তরুণ ভোটার ও শিক্ষিত নারীদের মন জয়ের চেষ্টা না করলেও চলবে। ফলে আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে ডেমোক্র্যাটরা মুফতে প্রচুর ভোট পেয়ে যাচ্ছে।' বাস্তবতা হচ্ছে, শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকানদের সমর্থন বেশি। দল হিসেবেও তারা বয়স্ক ও শ্বেতাঙ্গ কর্মজীবীদের ওপরই বেশি নির্ভর করে। আর বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রে অশ্বেতাঙ্গ ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। গত মঙ্গলবার বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, মোট ভোটারের মধ্যে তাদের হার ২১ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে এই হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ।
অশ্বেতাঙ্গদের মধ্যে হিসপানিকদের সংখ্যা সর্বাধিক। তাঁদের ৭১ শতাংশই ভোট দিয়েছেন ওবামাকে। রমনি পেয়েছেন ২৭ শতাংশ। একইভাবে কৃষ্ণাঙ্গ, তরুণ ও নারীদের মধ্যেও ওবামার জনপ্রিয়তা বেশি। ফলে সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীকে বিচার করলেরিপাবলিকানদের সমর্থন কমেছে। গত চার বছরে এই হার দুই শতাংশ কমেছে। একই সময়ে অশ্বেতাঙ্গ ভোটারের সংখ্যাও একই হারে বেড়েছে।
সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, 'জনপ্রিয়তা প্রতিযোগিতায় আমরা হেরে যাচ্ছি। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে নতুন প্রজন্মের নেতা তৈরিতেও অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি আমরা।' ফ্লোরিডার সিনেটর মারকো রুবিও বলেন, 'জনগণ এখন পরিবর্তন চাইছে।' ২০১৬ সালে হোয়াইট হাউসের জন্য লড়ার কথা রয়েছে তাঁর। টি-পার্টি সমর্থিত গ্রুপ ফ্রিডমওয়ার্কসের সভাপতি ম্যাট কিব বলেন, এ ধরনের একটি নির্বাচনের পর দলের মধ্যে সংকট তৈরি হতেই পারে। তবে পরিবর্তনের জন্য ইতিমধ্যেই দলের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। তৃণমূল পর্যায়ে এ ব্যাপারে সমর্থনও রয়েছে।
সংকট প্রসঙ্গে মেইন অঙ্গরাজ্যের সিনেটর সুসান কলিন্স বলেন, 'দেশে জনসংখ্যার দিক থেকে যে পরিবর্তন এসেছে তা আমাদের মেনে নিতে হবে। শুধু শ্বেতাঙ্গদের ভোটে রিপাবলিকানরা জিতবে না।' একসময় প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল ডেমোক্রেটিক পার্টিকেও। ১৯৮০, ১৯৮৪ ও ১৯৮৮ সালে টানা তিনটি নির্বাচনে পরাজিত হয় দলটি। এরপর শুরু হয় ক্লিনটন যুগের। মধ্যপন্থা অবলম্বন করে দুই মেয়াদে জয় পান তিনি। ক্লিনটন ও ওবামার সাবেক উপদেষ্টা রম এমানুয়েল বলেন, 'ওদের (রিপাবলিকান) এখন বিল ক্লিনটনের মতো একটা সময় প্রয়োজন।' সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।
« পূর্ববর্তী সংবাদ
   
পরবর্তী সংবাদ »
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার মতামত দিতে এখানে ক্লিক করুন
মূল পাতা বিশেষ কালের কণ্ঠ

No comments

Powered by Blogger.