সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ by আসজাদুল কিবরিয়া

ইউরোপজুড়ে আর্থিক সংকটের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তীব্রতর হচ্ছে। কঠোর রাজস্ব কৃচ্ছ্রতার প্রতিবাদে গ্রিসে শ্রমিক সংঘগুলো এরই মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করেছে। ফ্রান্সকে এই বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, আর্থিক খাতে নজরদারি না বাড়ালে পরিণতি ইতালি এমনকি স্পেনের মতো ভয়াবহ হতে পারে। স্পেনের বেকারত্বের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।


এ রকম একটা প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় শুরু হতে যাচ্ছে বৈশ্বিক সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন। স্পেনের রানি সোফিয়া সকালে ভিয়েনায় অস্ট্রিয়ান সেন্টারে (আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে) তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
জার্মানির বার্লিনভিত্তিক গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাব এই সম্মেলনের মূল আয়োজক। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা দর্শনকে দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। এবারেরটি চতুর্থ সম্মেলন। এই সম্মেলনে সারা বিশ্ব থেকে ৬০০ জনের বেশি গবেষক, বিশেষজ্ঞসহ রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামাজিক ব্যবসার অগ্রগতি, বিকাশ ও ধরন নিয়ে অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময় করবেন। একই সঙ্গে আগামী দিনে সামাজিক ব্যবসা কোনদিকে অগ্রসর হবে এবং তা বিশ্ব অর্থনীতিতে কীভাবে অবদান রাখতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হবে।
বরাবরের মতো এবারের সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ইতিমধ্যে ভিয়েনা পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ থেকে গ্রামীণ পরিবার ও ইউনূস সেন্টারের ৩২ জন প্রতিনিধি এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
ভিয়েনার গ্র্যান্ড হোটেলে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে গতকাল ড. ইউনূস এই সম্মেলন থেকে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার বিষয়ে তাঁর মনোভাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছি। প্রতিটি সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা পরিমাপ করার চেষ্টা করছি যে, এ বছরে এই সামাজিক ব্যবসা আন্দোলন নিয়ে কতদূর কী অগ্রগতি হলো। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে। যার মানে হলো লোকজন উৎসাহসহকারে আসছে। ভবিষ্যতে আরও আসবে। কেননা, ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ায় এই সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আর ২০১৪ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে আরেকটি সংগঠন।’
সামাজিক ব্যবসা নিয়ে উৎসাহের মাত্রাটা অবশ্য টের পাওয়া গেল গত মঙ্গলবার রাতেই। অস্ট্রিয়ার গণপূর্ত ও মহিলাবিষয়কমন্ত্রী হাইনিশ হোজেক ও সামাজিকবিষয়কমন্ত্রী রুডলফ হুনস্টফার এসে সাক্ষাৎ করলেন ড. ইউনূসের সঙ্গে। তাঁরা দেশটির বিভিন্ন শহরকে ‘সামাজিক ব্যবসা শহর’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। আপাতত মাঝারি ধরনের শহরগুলোতেই মনোযোগ দেওয়া হবে।
ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এবারের ফোরামের তাৎপর্যও ব্যাখ্যা করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে জাপানে এশিয়ান সোশ্যাল বিজনেস ফোরাম হয়েছে। আগামী বছর এপ্রিলে জার্মানিতে হবে ইউরোপীয় সোশ্যাল বিজনেস ফোরাম। জার্মানিভিত্তিক হলেও এটা গোটা ইউরোপের জন্য। এ থেকেই বোঝা যায়, সামাজিক ব্যবসার বিষয়ে ইউরোপজুড়ে আগ্রহ বিস্তৃত হচ্ছে। আসলে বর্তমান পুঁজিবাদের ওপর অনেক প্রশ্ন চলে এসেছে। এতে অনেক গলদ ধরা পড়েছে, যার প্রতিফলন হচ্ছে এসব আর্থিক সংকটে। এই গলদ কাটানোর জন্য আপাতত যে সমাধানটা দেখা যায়, তা হলো এই সামাজিক ব্যবসা। সবাই এখন বুঝতে চাইছে যে কীভাবে ও কতটা এই সমস্যা সমাধান হতে পারে।’

No comments

Powered by Blogger.