অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে এনএসআই কর্মকর্তাদের কিসের যোগাযোগ?- আমিনুল হত্যাকাণ্ড

পোশাকশ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত যে তথ্য বের হয়ে এসেছে, তা চাঞ্চল্যকর। সন্দেহভাজন হত্যাকারীর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্মকর্তাদের যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। অতীতে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের যোগসূত্র মিলেছে। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁদের কেউ কেউ যদি এ ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন, তা খুবই উদ্বেগজনক।


আমিনুল খুনের ঘটনায় শুরু থেকেই যাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছিল, সেই মোস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘ দিন ধরেই পলাতক, যা খুনের ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি এনএসআইয়ের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন এবং এর দুজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। পোশাকশ্রমিক নেতা আমিনুলের পেছনে এনএসআই অনেক আগে থেকেই লেগে ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর এক সহকর্মীর কাছ থেকে। এ ক্ষেত্রে যে অভিযোগ কাজ করেছে, তা হচ্ছে তিনি শ্রমিকদের দাবি আদায়ের নামে অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চোখ-কান খোলা রেখে তাদের গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে যাবে, সেটা সবাই আশা করে। কেউ অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা চলালে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও কোনো সমস্যা নেই। আমিনুল ইসলাম যেহেতু গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন এবং সর্বশেষ তাঁকে দেখা গেছে এনএসআইয়ের সোর্সের সঙ্গে। সুতরাং এই গোয়েন্দা সংস্থার যে দুই কর্মকর্তা সন্দেহভাজন খুনির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, তাঁরা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।
দুঃখজনকভাবে আমিনুল ইসলামের হত্যার ঘটনা শুরুতে দেশে তেমন আলোচনায় আসেনি। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করে থাকে যেসব দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশের পর বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং মামলার তদন্তের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। এই খুনের ঘটনার রহস্য ভেদ ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার সঙ্গে একদিকে যেমন দেশের আইনের শাসনের সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি রয়েছে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন।
আমিনুলের সন্দেহভাজন খুনির সঙ্গে এনএসআইয়ের কর্মকর্তাদের যোগাযোগের বিষয়টি তদন্তে চলে আসায় ওই দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। তাঁদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এ ঘটনা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। তবে যারাই আমিনুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাক, তাদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.