পাটপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার-অযোগ্যতা ও দুর্নীতিমুক্তি অপরিহার্য

সোনালি আঁশ পাট জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সোপান মজবুত করতে পারে বলে অনেক দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞই ইতিমধ্যে মত প্রকাশ করেছেন। কিছুদিন আগে পাটের বংশবৃত্তান্তও (জেনোম) আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাই। এই আবিষ্কার পাটের নতুন, উন্নত ও টেকসই জাত আবিষ্কারে যেমন সহায়ক হবে, তেমনি এর প্রোপার্টি রাইট মিলে গেলে ভবিষ্যতে এ থেকেও বিভিন্নমুখী আয়ের সংস্থান হবে।


ইতিমধ্যে বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে। ভবিষ্যতে পরিবেশ সচেতনতা যত বাড়বে ততই এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ যেহেতু প্রধান পাট উৎপাদনকারী দেশ তাই এ খাতে লাভের সিংহভাগটা আমাদেরই লাভ করার কথা। সরকার এ নিয়ে মহাপরিকল্পনাও প্রণয়ন করে ফেলেছে। কিন্তু আর দশটা সরকারি পরিকল্পনার মতো এই অতীব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থকরী ফসলটি এখন দুর্নীতি এবং অদক্ষতার মধ্যে পড়ে কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারছে না। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার সমকালের তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত 'পাট নিয়ে মহাপরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে' শিরোনামে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও পাট প্যাকেজিং আইন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় বাংলাদেশ কার্যত পাট রফতানিকারক দেশে পরিণত হচ্ছে। অথচ পাটের বহুমুখী ব্যবহারের প্রসার ঘটিয়ে আমরা এ খাত থেকেই বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি উপার্জন করতে পারি। শুধু তা নয়, পাটের বহুমুখী ব্যবহার যত বাড়বে ততই এখানে নতুন নতুন পাটশিল্প গড়ে উঠবে এবং পুরনো অনেক বন্ধ পাটকল আবার নতুন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে চালু করা সম্ভব হবে। এ জন্য সর্বাগ্রে পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত পাট প্যাকেজিং আইনটি যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। রিপোর্টে দেখা যায়, জুট ডাইভার্টিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) যে তিন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা, কারও শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা বা কেউ অন্য বিষয়ে পাস করে এখানে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে পাট প্যাকেজিং আইন যেমন কড়াকড়িভাবে কার্যকর করতে হবে, তেমনি 'জেডিপিসি'কে অযোগ্যতা ও রাজনৈতিক নিয়োগের অভিশাপমুক্ত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.