ইউনিয়ন পরিষদ-নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। ১২টি জেলার ৭২টি উপজেলায় ৫৯৬টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন হবে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে।


দেশে মোট ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা চার হাজার ৫০৫টি। এর মধ্যে চার হাজার ৩০০ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় হয়েছে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জুন মাসের মধ্যে এসব পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের সহায়তায় পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে প্রশংসিত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের বলিষ্ঠ অবস্থানের কারণে পৌরসভা নির্বাচনে তেমন কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। নির্দলীয় ঘোষিত হলেও ওই নির্বাচন শেষ পর্যন্ত দলীয় ও জোটগত শক্তি পরীক্ষার নির্বাচনে পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন জোট সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। দেশবাসীর আশা থাকবে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের আওতা আরও ব্যাপক। আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন গ্রামীণ জীবনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘি্নত করতে না পারে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করা চাই। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদসহ কয়েক ধরনের নির্বাচন নিয়মিত অনুষ্ঠানের রেওয়াজ চালু আছে। এর মধ্যেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আমেজই আলাদা। গ্রামের মানুষের কাছে এ যেন একান্ত নিজের প্রতিনিধি নির্বাচনের চমৎকার সুযোগ। আইন ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে জনসাধারণের অনেক ধরনের সেবা প্রাপ্য। এ প্রত্যাশা হয়তো সর্বদা পূরণ হয় না। স্থানীয় সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মহলের সুপারিশ রয়েছে। সরকারের তরফেও রয়েছে প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির রয়েছে বিস্তর ফারাক। এরপরও কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেগে ওঠে নিভৃত গ্রামীণ সমাজ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মনে করে, এ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের একান্ত কাছের লোককে বাছাই করা সম্ভব হয়। এ বাছাই প্রক্রিয়ায় কেউ যেন কোনোরূপ বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে পারার ওপর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি বহুলাংশে নির্ভর করবে। বর্তমানে গ্রামের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক। দ্রব্যমূল্য নিয়ে জনসাধারণের উদ্বেগ থাকলেও জীবনের নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে বলে সাধারণভাবে মনে করা হয় না। এ ধারা বজায় রাখতে হবে। গত দুই দশক ধরে দেখা যাচ্ছে, নারী সমাজ যে কোনো নির্বাচনেই নির্ভয়ে ভোট দিতে পারছে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ সদস্যপদ সংরক্ষিত রয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ভোটগ্রহণ পর্যায়ে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকলে এ সুবিধাকে নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া জোরদারে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে। এরপর আট বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। অথচ পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এভাবে সময়সূচি রক্ষা করতে না পারা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এর দায় কিন্তু নির্বাচন কমিশন ও সরকার, উভয়ের ওপরই বর্তাবে।

No comments

Powered by Blogger.