আমানত সংগ্রহ করে উধাও- টঙ্গীতে চার কোটি টাকা খোয়া

গাজীপুরের টঙ্গীতে এলাকাবাসীর কাছ থেকে প্রায় চার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে উধাও হয়ে গেছেন ‘ভোরের আলো ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের একটি সমিতির উদ্যোক্তারা। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন, সমিতির উদ্যোক্তা সম্পাদক মো. মাইনদ্দিন সরকার ওরফে রানা একাধিকবার আমানতের টাকা পরিশোধের সময় দিয়েও শোধ করেননি।


পরে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। সেপ্টেম্বর থেকে সমিতির কার্যালয়ে তালা ঝুলছে।
সমিতির সদস্য দত্তপাড়া এলাকার মো. মোজামেঞ্চল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এক বছর আগে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ওই সমিতিতে আমানত রাখেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি নিয়মিত মুনাফা পাননি। আমানতের টাকা ফেরত চেয়েও এখন পর্যন্ত পাননি। গত ১৯ এপ্রিল তিনি টঙ্গী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
টঙ্গী পাইলট স্কুল মার্কেটের একটি দোকানের মালিক আবদুর রাজ্জাক ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর ওই সমিতিতে চার লাখ ১৩ হাজার টাকা আমানত রাখেন। প্রতি মাসে মুনাফা বাবদ তাঁকে আট হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে কোনো মুনাফাই দেওয়া হয়নি। এখন সমিতির উদ্যোক্তারা কার্যালয় বন্ধ করে চলে গেছেন।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকার মো. মোস্তফা তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা, পাপিয়া জামান এক লাখ ৩৫ হাজার ও দেওড়া এলাকার মো. ইয়াছিন মিয়া ছয় লাখ টাকা ওই সমিতিতে আমানত রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে টঙ্গীর চেরাগআলী মার্কেট এলাকার একটি ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় কার্যক্রম শুরু করে ভোরের আলো সমিতি। ২০১১ সালের অক্টোবরে সমবায় সমিতির নিবন্ধন পায় এটি।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, এই সমিতি নিয়মবহির্ভূতভাবে সাধারণ মানুষকে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। এক লাখ টাকা আমানত রাখলে গ্রাহককে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এভাবে দুই শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কমপক্ষে চার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে এই সমিতি। কিন্তু সময়মতো আমানত ফেরত না দিয়ে উদ্যোক্তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।
সমিতির সম্পাদক মো. মাইনদ্দিন সরকার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা করে সময় নিয়ে টাকা পরিশোধ করে দেবেন। সমিতির কার্যালয়ে তালা দেওয়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, নতুন জায়গায় অফিস নিয়ে তিনি গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করবেন।
গাজীপুর জেলা সমবায় কার্যালয়ের নিরীক্ষা কর্মকর্তা (অডিট অফিসার) মো. জহিরুল ইসলাম ভোরের আলো সমিতিতে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভোরের আলো সমিতি প্রায় চার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে।
অপর নিরীক্ষা কর্মকর্তা আবদুল গফুর বলেন, সমবায় নীতিমালা অনুযায়ী সমিতির কার্যক্রম শুরু করার পাঁচ বছর পরই কেবল আমানত সংগ্রহ করা যায়। এ ছাড়া আমানত সংগ্রহ করলেও সুনির্দিষ্টভাবে মাসিক বা বার্ষিক মুনাফা ঘোষণা করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.