মালয়েশিয়াগামী ট্রলারডুবি- সাগরে ভাসছে লাশ, উদ্ধারের কেউ নেই

বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ সীমানায় ভাসছে অনেক লাশ। গত বুধবার ভোররাতে সাগরের সাতবাইন নামক স্থানে ১১০ জন যাত্রী নিয়ে একটি কাঠের ট্রলার ডুবে যায়। নৌবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ওই দিন সকালে ২৮ জনকে উদ্ধার করলেও ৮২ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন।


সাগরে ভাসতে থাকা লাশগুলো ওই ট্রলারের যাত্রী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য জানান, দালাল চক্র টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করে মালয়েশিয়ায় আদম পাচারের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ কারণে সাগরে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটলে কেউ উদ্ধার তৎপরতায় তেমন আগ্রহ দেখায় না।
কোস্টগার্ড টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ স্টেশনের লেফটেন্যান্ট এম বদরুদৌজা বলেন, ‘ট্রলারডুবির পর বৃহস্পতিবার সাগর থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখন সাগরে লাশের সন্ধানে কোনো বাহিনীর তৎপরতা নেই। কেউ লাশের সন্ধান দিলে আমরা সাগরে নামতে প্রস্তুত।’
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে টেকনাফ উপকূলের সাবরাং খুরেরমুখ সৈকতে একটি লাশ ভেসে আসে। লাশটি বিজিবির টহলদল উদ্ধার করে। স্থানীয় লোকজন লাশটি সাবরাং কাটাবুনিয়া গ্রামের মৃত আলী আহমদের ছেলে মো আলমের (৩৫) বলে শনাক্ত করেন।
নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে টেকনাফ সৈকতে ঘুরছেন স্থানীয় কামাল, নূর মোহামঞ্চদ, জাকির হোসেনসহ অনেকে। নূর মোহামঞ্চদ ও জাকির হোসেন বলেন, ডুবে যাওয়া ট্রলারের ভেতরে ৪০ থেকে ৫০ দ‘জন যাত্রী আটকে থাকতে পারেন। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত কেউ ট্রলারটি উদ্ধারের চেষ্টা করেনি। জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় গভীর সাগরে লাশ ভাসতে দেখেন। কিন্তু মামলার ভয়ে তাঁরা লাশ তুলে তীরে আনার সাহস পাচ্ছেন না।
ট্রলারডুবির পর একটি তেলের গ্যালন নিয়ে ভাসতে ভাসতে তীরে ফিরে আসেন মালয়েশিয়াগামী যাত্রী টেকনাফের আবদুল শুক্কুর (২০)। তিনি বলেন, ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার আগে কোল্ডস্টোরের (জাল, মাছ ও বরফ রাখার স্থান) ছোট দরজা দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ জনের বেশি যাত্রী ঢোকানো হয়েছিল। ট্রলারডুবির পর যাত্রীরা সবাই ওই কক্ষে আটকা পড়েন।
লাশ উদ্ধার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল আলম বলেন, তিনি এ থানায় যোগদান করেছেন সাত দিন আগে। তিনি আসার কয়েক দিন আগে ১২৮ জন যাত্রী নিয়ে আরও একটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছিল বলে শুনেছেন। কিন্তু সাগরে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো নৌযান পুলিশের নেই। তাই পুলিশ সাগর থেকে লাশ উদ্ধার করতে পারছে না।
টেকনাফ ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান বলেন, জেলেদের মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে, সাগরে বেশ কিছু লাশ ভাসছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় লাশের সন্ধানে সাগরে নামা সম্ভব হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.